فَقَالُوا۟ رَبَّنَا بَـٰعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ فَجَعَلْنَـٰهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَـٰهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّكُلِّ صَبَّارٍۢ شَكُورٍۢ
কিন্তু তারা বলল, “হে আমাদের রব! আমাদের ভ্রমণের দূরত্ব দীর্ঘায়িত করো।” ৩২ তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে। শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে কাহিনী বানিয়ে রেখে দিয়েছি এবং তাদেরকে একদম ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। ৩৩ নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে বেশী বেশী সবরকারী ও বেশী বেশী কৃতজ্ঞ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য। ৩৪
৩২
তারা যে মুখে এ দোয়া উচ্চারণ করেছিল, এমনটি অপরিহার্য নয়। আসলে যে ব্যক্তিই আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় সে যেন তার অবস্থা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একথা বলে, হে আল্লাহ! আমি এ নিয়ামতগুলোর যোগ্য নই। অনুরূপভাবে যে জাতি আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অযথা সুবিধা লাভ করে সে যেন নিজের রবের কাছে দোয়া করে, হে আমাদের বর! এ অনুগ্রহগুলো আমাদের থেকে ছিনিয়ে নাও, কারণ আমরা এর যোগ্য নই।
এছাড়াও رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا (হে আল্লাহ! আমাদের সফর দীর্ঘায়িত করে দাও) ---এ শব্দগুলো থেকে কিছুটা একথাও প্রতীয়মান হয় যে, সম্ভবত সাবা জাতির চোখে তাদের বিপুল জনসংখ্যা বিরক্তিকর মনে হয়েছিল এবং অন্যান্য জাতির মতো তারাও নিজেদের বর্ধিত জনসংখ্যাকে সংকট মনে করে জন্ম নিয়্ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছিল।
৩৩
অর্থাৎ সাবা জাতি এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় যে তাদের বিক্ষিপ্ততা ও বিশৃঙ্খলা প্রবাদে পরিণত হয়। আজও যদি আরববাসী কোন জাতির মধ্যকার বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের কথা আলোচনা করে তাহলে বলেتفرقوا ايدى سبا “তারা তো এমন নৈরাজ্যের শিকার হয়েছে যেমন সাবা জাতি নৈরাজ্যের শিকার হয়েছিল।” আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন অনুগ্রহের অবসান ও অবক্ষয়ের যুগ শুরু হয় তখন সাবার বিভিন্ন গোত্র নিজেদের স্বদেশ ত্যাগ করে আববের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। গাসসানীরা জর্দ্দান ও সিরিয়ার দিকে চলে যায়। আওস ও খাযরাজ গোত্র ইয়াসরিবে বসতি স্থাপন করে। খুযা’আহ গোত্র জেদ্দার নিকটবর্তী তিহামা এলাকায় আবাস গড়ে তোলে। আযদ গোত্র ওমানে গিয়ে ঠাঁই নেয়। লাখম, জযাম এবং কিন্দাও বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত সাবা নামে কোন জাতিই আর দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকেনি। কেবলমাত্র গল্প কাহিনীতেই তার আলোচনা থেকে গেছে।
৩৪
এ প্রেক্ষাপটে সবরকারী ও কৃতজ্ঞ বলতে এমন ব্যক্তি বা দল বুঝায় যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত লাভ করে অহংকারে মেতে ওঠে না, সমৃদ্ধিশালী হয়ে আত্মম্ভরী হয় না এবং যে আল্লাহ এসব কিছু দান করেছেন তাকে ভুলে যায় না। এ ধরনের লোকেরা যারা উন্নতি ও অগ্রগতির সুযোগ পেয়ে নাফরমানির পথ অবলম্বলন করে এবং অশুভ পরিণামের সম্মুখীন হয় তাদের অবস্থা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারে।