আয়াত
১১ ) এখন এদেরকে জিজ্ঞেস করো, এদের সৃষ্টি বেশী কঠিন, না আমি যে জিনিসগুলো সৃষ্টি করে রেখেছি সেগুলোর? ৮ এদেরকে তো আমি সৃষ্টি করেছি আঠাল কাদামাটি দিয়ে। ৯
فَٱسْتَفْتِهِمْ أَهُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَم مَّنْ خَلَقْنَآ إِنَّا خَلَقْنَٰهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍۭ ١١
১২ ) তুমি তো (আল্লাহর কুদরাতের মহিমা দেখে) অবাক হচ্ছো এবং এরা তার প্রতি করছে বিদ্রূপ।
بَلْ عَجِبْتَ وَيَسْخَرُونَ ١٢
১৩ ) তাদেরকে বুঝালেও তারা বোঝে না।
وَإِذَا ذُكِّرُوا۟ لَا يَذْكُرُونَ ١٣
১৪ ) কোন নিদর্শন দেখলে উপহাস করে উড়িয়ে দেয়
وَإِذَا رَأَوْا۟ ءَايَةً يَسْتَسْخِرُونَ ١٤
১৫ ) এবং বলে, “এ তো স্পষ্ট যাদু। ১০
وَقَالُوٓا۟ إِنْ هَٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ ١٥
১৬ ) আমরা যখন মরে একেবারে মাটি হয়ে যাবো এবং থেকে যাবে শুধুমাত্র হাড়ের পিঞ্জর তখন আমাদের আবার জীবিত করে উঠানো হবে, এমনও কি কখনো হতে পারে?
أَءِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَٰمًا أَءِنَّا لَمَبْعُوثُونَ ١٦
১৭ ) আর আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকেও কি উঠানো হবে?”
أَوَءَابَآؤُنَا ٱلْأَوَّلُونَ ١٧
১৮ ) এদেরকে বলো, হ্যাঁ এবং তোমরা (আল্লাহর মোকাবিলায়) অসহায়। ১১
قُلْ نَعَمْ وَأَنتُمْ دَٰخِرُونَ ١٨
১৯ ) ব্যস, একটিমাত্র বিকট ধমক হবে এবং সহসাই এরা স্বচক্ষে (সেই সবকিছু যার খবর দেয়া হচ্ছে) দেখতে থাকবে। ১২
فَإِنَّمَا هِىَ زَجْرَةٌ وَٰحِدَةٌ فَإِذَا هُمْ يَنظُرُونَ ١٩
২০ ) সময় এরা বলবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এতো প্রতিফল দিবস
وَقَالُوا۟ يَٰوَيْلَنَا هَٰذَا يَوْمُ ٱلدِّينِ ٢٠
৮.
আখেরাত সম্পর্কে মক্কার কাফেররা যে সন্দেহ পেশ করতো এটি তার জওয়াব। তাদের মতে আখেরাত সম্ভব নয়। কারণ যেসব মানুষ মরে গেছে তাদের আবার দ্বিতীয়বার জন্মলাভ করা অসম্ভব। এর জবাবে আখেরাতের সম্ভাবনায় যুক্তি পেশ করতে গিয়ে আল্লাহ সর্বপ্রথম তাদের সামনে এ প্রশ্ন রাখেন, তোমাদের মতে যদি মৃত মানুষদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করা অনেক কঠিন কাজ হয়ে থাকে এবং এ সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমার না থেকে থাকে তাহলে বলো, এ পৃথিবী ও আকাশ এবং এদের যে অসংখ্য জিনিস রয়েছে এগুলো সৃষ্টি করা কি সহজ কাজ? তোমাদের বুদ্ধি কোথায় হারিয়ে গেছে? যে আল্লাহর জন্য এ বিশাল বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করা কঠিন কাজ ছিল না এবং যিনি তোমাদের নিজেদেরকে একবার সৃষ্টিও করেছেন তাঁর ব্যাপারে তোমরা কেমন করে ভাবতে পারলে যে তোমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করতে তিনি অক্ষম?
৯.
অর্থাৎ এ মানুষ তো বিরাট জিনিস নয়। মাটি দিয়ে একে তৈরি করা হয়েছে এবং এ মাটি দিয়ে আবার তৈরি করা যেতে পারে। আঠাল কাদামাটি দিয়ে মানুষ তৈরি করার অর্থ এও হতে পারে যে, প্রথম মানুষটিকে সৃষ্টি করা হয়েছিল মাটি দিয়ে এবং তারপর মানুষের বংশধারা ঐ প্রথম মানুষটির শুক্রবীজ থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। এর অর্থ এও হতে পারে যে, প্রত্যেকটি মানুষ আঠাল কাদামাটির তৈরি। কারণ মানুষের অস্তিত্বের সমস্ত উপাদান মাটি থেকেই লাভ করা হয়। যে বীর্যে তার জন্ম তা খাদ্য থেকে তৈরি এবং গর্ভসঞ্চার থেকে শুরু করে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তার সমগ্র অস্তিত্ব যেসব উপাদানে তৈরি হয় তার খাদ্যই তার সবটুকু সরবরাহ করে। এ খাদ্য পশু ও জীবজন্তু থেকে সরবরাহকৃত হোক বা উদ্ভিদ থেকে মূলত এর উৎস হচ্ছে মাটি, যা পানির সাথে মিশে মানুষের খাদ্য হওয়ার এবং তরকারী ও ফল উৎপন্ন করার যোগ্যতা অর্জন করে এবং জীবজন্তু লালন করারও যোগ্যতা অর্জন করে, যাদের দুধ ও গোশ্ত মানুষ আহার করে।
কাজেই যুক্তির বুনিয়াদ এরই ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, এ মাটি যদি জীবন গ্রহণ করার যোগ্যতা না রাখতো তাহলে তোমরা কেমন করে জীবিত আকারে দুনিয়ার বুকে বিরাজ করছো? আর যদি তার মধ্যে জীবন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে, যেমন তোমাদের অস্তিত্বই এ সম্ভানার দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ পেশ করছে, তাহলে আগামীকাল এ একই মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি অসম্ভব হবে কেন?
১০.
অর্থাৎ ঐন্দ্রজালিক জগতের কথা। এ ব্যক্তি বলছে কোন ঐন্দ্রজালিক জগতের কথা। সেখানে মৃতরা পুনরুজ্জীবিত হবে। আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে। জান্নাত আবাদ করা হবে। জাহান্নামীদের শাস্তি বিধান করা হবে। অথবা এর এ অর্থও হতে পারে যে, এ ব্যক্তি মন ভুলানো কথা বলছে। এর এ কথাগুলোই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, কেউ এর ওপর যাদু করে দিয়েছে, যার ফলে এ সুস্থ-সচেতন ব্যক্তিটি এখন এ ধরনের আবোল-তাবোল কথা বলছে।
১১.
অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে যা ইচ্ছা তাই বানাতে পারে। যখন তিনি চাইলেন তখনই তাঁর একটি ইশারাতেই তোমরা অস্তিত্ব লাভ করলে। যখন তিনি চাইবেন তখনই তাঁর একটি ইঙ্গিতেই তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। আবার যখন তিনি চাইবেন সাথে সাথেই তাঁর একটি ইংগতিই তোমাদেরকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে।
১২.
অর্থাৎ এ ঘটনা সংঘটিত হবার যখন এসে যাবে তখন দুনিয়াকে পুনরায় উত্থিত করা কঠিন কাজ হবে না। একটি মাত্র বিকট ধমক ঘুমন্তদেরকে জাগিয়ে উঠিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট হবে। “বিকট ধমক” শব্দটি বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে মৃতুর পর পুনরুত্থানের এমন কিছু ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে যা থেকে বুঝা যায়, সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ মরে গিয়েছিল সবাই যেন শুয়ে ঘুমোচ্ছে এবং হঠাৎ কেউ ধমক দিয়ে বললো, “উঠে পড়ো” আর সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে তারা সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।