আয়াত
২১ ) “এটা সে ফায়সালার দিন যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে।” ১৩
هَٰذَا يَوْمُ ٱلْفَصْلِ ٱلَّذِى كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢١
২২ ) (হুকুম দেয়া হবে) ঘেরাও করে নিয়ে এসো
ٱحْشُرُوا۟ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ وَأَزْوَٰجَهُمْ وَمَا كَانُوا۟ يَعْبُدُونَ ٢٢
২৩ ) সব জালেমকে, ১৪ তাদের সাথীদেরকে ১৫ এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদদের তারা বন্দেগী করতো তাদেরকে ১৬ তারপর তাদের সবাইকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দাও।
مِن دُونِ ٱللَّهِ فَٱهْدُوهُمْ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلْجَحِيمِ ٢٣
২৪ ) আর এদেরকে একটু থামাও, এদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে।
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْـُٔولُونَ ٢٤
২৫ ) “তোমাদের কি হয়েছে, এখন কেন পরস্পরকে সাহায্য করো না?
مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُونَ ٢٥
২৬ ) আরে, আজ তো এরা নিজেরাই নিজেদেরকে (এবং একজন অন্যজনকে) সমর্পণ করে দিয়ে যাচ্ছে।” ১৭
بَلْ هُمُ ٱلْيَوْمَ مُسْتَسْلِمُونَ ٢٦
২৭ ) এরপর এরা একে অন্যের দিকে ফিরবে এবং পরস্পর বিতর্ক শুরু করে দেবে।
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَآءَلُونَ ٢٧
২৮ ) (আনুগত্যকারীরা তাদের নেতাদেরকে) বলবে, “তোমরা তো আমাদের কাছে আসতে সোজা দিক দিয়ে।” ১৮
قَالُوٓا۟ إِنَّكُمْ كُنتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ ٱلْيَمِينِ ٢٨
২৯ ) তারা জবাব দেবে, “না, তোমরা নিজেরাই মু’মিন ছিলে না।
قَالُوا۟ بَل لَّمْ تَكُونُوا۟ مُؤْمِنِينَ ٢٩
৩০ ) তোমাদের ওপর আমাদের কোন জোর ছিল না। বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে বিদ্রোহী।
وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُم مِّن سُلْطَٰنٍۭ بَلْ كُنتُمْ قَوْمًا طَٰغِينَ ٣٠
১৩.
হতে পারে মু’মিনরা তাদেরকে একথা বলে। এও হতে পারে, এটি ফেরশতাদের উক্তি। এও হতে পারে, হাশরের ময়াদনের সমগ্র পরিবেশ সে সময় সমকালীন পরিস্থিতির মাধ্যমে একথা বলছিল। আবার এও হতে পারে, এটা তাদের নিজেদেরই দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ নিজেদের মনে মনে তারা নিজেদেরকেই সম্বোধন করে বলছিল, এ দুনিয়ায় সারা জীবন তোমরা একথা মনে করতে থেকেছো যে, ফায়সালা করার দিন কখনো আসবে না, কিন্তু এখন তোমাদের সর্বনাশের সময় এসে গেছে, যেদিনকে মিথ্যা বলতে সেদিনটি আজ তোমাদের সামনে উপস্থিত।
১৪.
জালেম বলতে কেবল তাদেরকে বুঝানো হয়নি যারা অন্যের প্রতি জুলুম করেছে। বরং কুরআনের পরিভাষায় এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই জালেম যে আল্লাহর মোকাবিলায় বিদ্রোহ, সীমালঙ্ঘন ও নাফরমানির পথ অবলম্বন করেছে।
১৫.
মূলে أَزْوَاجَ (আয্ওয়াজ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ তাদের এমন সব স্ত্রীও হতে পারে যারা এ বিদ্রোহে সহযোগী ছিল। আবার এমনসব লোকও হতে পারে যারা তাদেরই মতো বিদ্রোহী সীমালংঘনকারী ও নাফরমান ছিল। এছাড়া এর অর্থ এও হতে পারে যে, এক এক ধরনের অপরাধীকে আলাদা আলাদা জোটের আকারে একত্র করা হবে।
১৬.
এখানে মাবুদদের অর্থ দু’ধরনের মাবুদ। এক, এমনসব মানুষ ও শয়তান যাদের নিজেদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা এ ছিল যে, লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের বন্দেগী করুক। দুই, এমনসব মূর্তি, গাছ, পাথর ইত্যাদি যাদের পূজায় দুনিয়াবাসীরা লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে প্রথম ধরনের মাবুদরা নিজেরাই অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং শাস্তির জন্য তাদেরকে জাহান্নামের পথ দেখানো হবে। আর দ্বিতীয় ধরনের মাবুদদেরকে তাদের ইবাদাতকারীদের সাথে এজন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে যে, তারা এদেরকে দেখে সবসময় লজ্জা অনুভব করবে এবং নিজেদের নির্বুদ্ধিতার অনুশোচনা করতে থাকবে। এরা ছাড়া তৃতীয় আর এক ধরনের মাবুদ হচ্ছে, দুনিয়ায় যাদেরকে পূজা করা হয়েছে কিন্তু তারা কখনো তাদের পূজা-উপাসনা করার প্রতি ইঙ্গিত করেনি। বরং তারা সবসময় মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করতে নিষেধ করেছেন। যেমন ফেরেশতা, আম্বিয়া ও আউলিয়া এ ধরনের মাবুদদেরকে মোটেই অন্যান্য মাবুদদের মতো তাদের উপাসনাকারীদের সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না।
১৭.
প্রথম বাক্যটি বলা হবে অপরাধীদেরকে সম্বোধন করে। দ্বিতীয় বাক্যটি উপস্থিত এমনসব সাধারণ ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বলা হবে যারা সেসময় জাহান্নামের পথে অপরাধীদের রওয়ানা হবার দৃশ্য দেখতে থাকবে। এ বাক্যটি নিজেই জানিয়ে দিচ্ছে সেসময় অবস্থাটা কেমন হবে। বড় বড় তাগড়া অপরাধীদের কোমরের বল শেষ হয়ে যাবে। কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে তারা কান ধরে জাহান্নামের দিকে চলে যেতে থাকবে। কোথাও কোন ‘জাহাঁপনা’ ধাক্কা খেতে থাকবে এবং দরবারীদের মধ্য থেকে কেউ সেই “মহামতি মহামহিমকে” উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে না। কোথাও কোন বিশ্ব বিজয়ী ও কোন ডিরেক্টর চরম লাঞ্ছনা সহকারে চলে যেতে থাকবে এবং তার পরাক্রমশালী সেনাদল নিজেরাই তাকে দণ্ড দেবার জন্য এগিয়ে দেবে। কোথাও কোন পীর সাহেব বা গুরুজী অথবা হোলি ফাদার জাহান্নামের শাস্তি লাভ করবে এবং মুরীদদের একজনও “হুজুর আলা’র মর্যাদাহানির কথা ভাববে না। কোথাও কোন জাতীয় নেতা বড়ই হীনতার মধ্যে জাহান্নামের পথে যাত্রা করবে এবং দুনিয়ায় যেসব লোক তার শ্রেষ্টত্ব ও প্রাধান্যের ঝাণ্ডা বুলন্দ করে বেড়াতো তারা সবাই তার দিক থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নেবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, যে প্রেমিক দুনিয়ায় তার প্রেমাম্পদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল সেও তার প্রেমাম্পদের দুরবস্থার দিকে ভ্রুক্ষেপই করবে না। এ অবস্থার চিত্র এঁকে মহান আল্লাহ আসলে একথা বুঝাতে চান যে, দুনিয়ায় মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক খোদাদ্রোহিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে তা কিভাবে আখেরাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে এবং এখানে যারা নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয়ে আছে সেখানে তাদের অহংকারের দেয়াল কিভাবে মিসমার হয়ে যাবে।
১৮.
মূলে বলা হয়েছেঃ كُنْتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ “তোমরা আমাদের কাছে আসতে ইয়ামীনের পথে।” ইয়ামীন শব্দটি আরবী ভাষায় বিভিন্ন অর্থে বলা হয়। যদি একে শক্তি অর্থে বলা হয়, তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে তাই তোমরা নিজেদের শক্তি ব্যবহার করে আমাদের গোমরাহীর দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদের ধোঁকা দিয়েছো। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে, যে পথে তোমরা আমাদের চালাচ্ছো এটিই সত্য ও কল্যাণের পথ। তাই আমরা ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয়, তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদের নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করছো তা-ই সত্য।