আয়াত
৮১ ) আসলে সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
إِنَّهُۥ مِنْ عِبَادِنَا ٱلْمُؤْمِنِينَ ٨١
৮২ ) তারপর অন্যদলকে আমি ডুবিয়ে দেই।
ثُمَّ أَغْرَقْنَا ٱلْءَاخَرِينَ ٨٢
৮৩ ) আর নূহের পথের অনুসারী ছিল ইবরাহীম।
وَإِنَّ مِن شِيعَتِهِۦ لَإِبْرَٰهِيمَ ٨٣
৮৪ ) যখন সে তাঁর রবের সামনে হাজির হয় “বিশুদ্ধ চিত্ত” নিয়ে। ৪৪
إِذْ جَآءَ رَبَّهُۥ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ ٨٤
৮৫ ) যখন বলে সে তাঁর পিতা ও তাঁর জাতিকে ৪৫ “এগুলো কি জিনিস যার ইবাদাত তোমরা করছো?
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِۦ مَاذَا تَعْبُدُونَ ٨٥
৮৬ ) আল্লাহকে বাদ দিয়ে কি তোমরা মিথ্যা বানোয়াট মাবুদ চাও?
أَئِفْكًا ءَالِهَةً دُونَ ٱللَّهِ تُرِيدُونَ ٨٦
৮৭ ) সমস্ত বিশ্ব-জগতের রব আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি?” ৪৬
فَمَا ظَنُّكُم بِرَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ٨٧
৮৮ ) তারপর ৪৭ সে তারকাদের দিকে একবার তাকালো ৪৮
فَنَظَرَ نَظْرَةً فِى ٱلنُّجُومِ ٨٨
৮৯ ) এবং বললো, আমি অসুস্থ। ৪৯
فَقَالَ إِنِّى سَقِيمٌ ٨٩
৯০ ) কাজেই তারা তাঁকে ত্যাগ করে চলে গেলো। ৫০
فَتَوَلَّوْا۟ عَنْهُ مُدْبِرِينَ ٩٠
৪৪.
রবের সামনে হাজির হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাঁর দিকে রুজু হওয়া এবং সবার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র তাঁর দিকে মুখ করা। আর বিশুদ্ধ চিত্ত (قلب السليم) মানে হচ্ছে “সঠিক ও নিষ্কলূষ অন্তকরণ।” অর্থাৎ সব রকমের বিশ্বাসগত ও নৈতিক ত্রুটিমুক্ত অন্তর। যেখানে কুফরী ও শিরক এবং সন্দেহ-সংশয়ের লেশ মাত্রও নেই। যার মধ্যে নাফরমানী ও বিদ্রোহের কোন সামান্যতম অনুভূতিও পাওয়া যায় না। যার মধ্যে কোন প্রকান প্যাঁচ ও জটিলতা নেই। যা সব ধরনের অসৎ প্রবণতা ও অপবিত্র কামনা-বাসনার সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত। যার মধ্যে কারো বিরুদ্ধে হিংসা, বিদ্বেষ ও অকল্যাণ কামনা পাওয়া যায় না এবং যার নিয়তে কোনপ্রকার ত্রুটি ও কৃত্রিমতা নেই।
৪৫.
হযরত ইবরাহীমের (আ) এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল আন’আম, ৫০-৫৫, মারয়াম, ২৬-২৭ ; আল আম্বিয়া, ৫১-৬৬ ; আশ শূ’আরা, ৫০-৬৪ এবং আল আনকাবূত, ২৫-৪৮ টীকা।
৪৬.
অর্থাৎ আল্লাহকে তোমরা কী মনে করেছো? তোমরা কি মনে করো, এসব কাঠ-পাথরের তৈরি দেবতারা তাঁর সমজাতীয় হতে পারে? অথবা এরা তাঁর গুণাবলী ও ক্ষমতায় শরীক হতে পারে? আর তোমরা কি এ বিভ্রান্ত চিন্তারও শিকার হয়েছো যে, তাঁর সাথে এত বড় গোস্তাখী করার পর তোমরা তাঁর পাকড়াও থেকে রেহাই পেয়ে যাবে?
৪৭.
এখন একটি বিশেষ ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা এসেছে সূরা আল আম্বিয়া, ৫১-৭৩ এবং আল ’আনকাবূতে, ১৬-২৭ আয়াতে।
৪৮.
ইবনে আবি হাতেম প্রসিদ্ধ তাবে’ঈ মুফাসসির কাতাদাহর এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, আরবরা نَظَرَ فِى النَّجُوْمِ (সে তারকাদের দিকে তাকালো) শব্দাবলী প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহার করে তার যে অর্থ গ্রহণ করে তা হচ্ছে এই যে, সে ভাবনা-চিন্তা করলো অথবা সে চিন্তা করতে লাগলো। আল্লামা ইবনে কাসীর এ উক্তিটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এমনিতেও প্রায়ই দেখা যায়, যখন কোন ব্যক্তির সামনে চিন্তার কোন বিষয় আসে তখন সে আকাশের দিকে অথবা ওপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর ভেবে-চিন্তে জবাব দেয়।
৪৯.
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর জীবনে তিনটে মিথ্যা বলেছিলেন বলে যে কথা বলা হয়ে থাকে এটি তার একটি। অথচ একথাটিকে মিথ্যা বা বাস্তব বিরোধী বলার জন্য প্রথমে কোন উপায়ে একথা জানা উচিত যে, সে সময় হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কোন প্রকারের কোন কষ্ট ও অসুস্থতা ছিল না এবং তিনি নিছক বাহানা করে একথা বলেছিলেন। যদি এর কোন প্রমাণ না থেকে থাকে, তাহলে অযথা কিসের ভিত্তিতে একে মিথ্যা গণ্য করা হবে। এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আমি তাফহীমুল কুরআন সূরা আল আম্বিয়া, ৬০ টীকায় করেছি এবং আরো কিছু আলোচনা রাসায়েল ও মাসায়েল ২ খণ্ডের ২০-২৪ পৃষ্ঠার এসে গেছে।
৫০.
আসল ব্যাপার কি ছিল তা এ বাক্য নিজেই প্রকাশ করছে। মনে হচ্ছে সম্প্রদায়ের লোকেরা কোন জাতীয় মেলায় যাচ্ছিল। হযরত ইবরাহীমের পরিবারের লোকেরা তাঁকেও সঙ্গে যেতে অনুরোধ করে থাকবে। তিনি আমার শরীর খারাপ, আমি যেতে পারবো না, বলে ওযর পেশ করে দিয়ে থাকবেন। এখন যদি একথাটা একেবারে অসত্য বা বাস্তব বিরোধী হতো, তাহলে ঘরের লোকেরা তাঁকে বলতো, শরীর-স্বাস্থ্য তো ভালোই আছে দেখতে পাচ্ছি তাহলে আবার খামখা বাহানা করছো কেন? কিন্তু যখন তারা এ ওজর গ্রহণ করে তাঁকে পেছনে রেখে চলে গেলো তখন এ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একথা প্রকাশ পায় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম সে সময় সর্দি, কাশি অথবা এ ধরনের কোন সাধারণ রোগে ভুগছিলেন, যার ফলে পরিবারের লোকেরা তাঁকে রেখে চলে যেতে রাজি হয়ে যায়।