وَأَخْذِهِمُ ٱلرِّبَوٰا۟ وَقَدْ نُهُوا۟ عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلْبَـٰطِلِ ۚ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَـٰفِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًۭا
তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল ২০০ এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। ২০১ আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি। ২০২
২০০
তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশটি লিখিত রয়েছেঃ
“যদি তুমি আমার লোকদের মধ্য থেকে যে তোমার কাছে থাকে এমন কোন অভাবীকে ঋণ দাও তাহলে তার সাথে ঋণদাতার ন্যায় ব্যবহার করো না। তার কাছে থেকে সুদও নিয়ো না। যদি তুমি কখনো নিজের প্রতিবেশীর কাপড় বন্ধকও রাখো তাহলে সূর্য ডোবার আগেই তারটা তাকে ফেরত দাও। কারণ সেটিই তার একমাত্র পরার কাপড়। সেটিই তার শরীর ঢাকার জন্য একমাত্র পোশাক। তা না হলে সে কি গায়ে দিয়ে ঘুমাবে? কাজেই সে ফরিয়াদ করলে আমি তার কথা শুনবো। কারণ আমি করুণাময়।” (যাত্রা পুস্তক ২২: ২৫-২৭)।
এছাড়াও তাওরাতের আরো কয়েক স্থানে সুদ হারাম হবার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই তাওরাতের প্রতি ঈমানের দাবীদার ইহুদী সমাজ আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সুদখোর, সংকীর্ণমনা ও পাষাণ হৃদয় জাতি হিসেব সর্বত্র পরিচিত এবং এসব ব্যাপারে তাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়ে থাকে।
২০১
সামনের দিকে সূরা আন আমের ১৪৬ আয়াতে যে বিষয়বস্তুর আলোচনা আসছে এখানে সম্ভবত সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলদের ওপর এমন সব প্রাণী হারাম করে দেয়া হয় যাদের নখর রয়েছে। গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের ওপর হারাম করে দেয়া হয়। এছাড়াও সম্ভবত ইহুদী ফিকাহ শাস্ত্রে অন্য যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতার সন্ধান পাওয়া যায়, এখানে সেদিকেও ইশারা করা হয়েছে। কোন দলের জীবন যাপনের ক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়া আসলে তার জন্য একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।-(বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন সূরা আন’আম, ১২২ নম্বর টীকা)।
২০২
অর্থাৎ এ জাতির যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আনুগত্য পরিহার করে বিদ্রোহ ও অস্বীকৃতির পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রাখা হয়েছে। দুনিয়ায় যে ভীষণ শাস্তি তারা পেয়েছে ও পাচ্ছে তা আজ পর্যন্ত অন্য কোন জাতি পায়নি। দু’হাজার বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো দুনিয়ার কোথাও তারা সম্মানজনক কোন ঠাঁই করতে পারেনি। দুনিয়ায় তাদের বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সর্বত্র তারা বিদেশী। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি যুগও অতিক্রান্ত হয়নি যখন দুনিয়ার কোথাও না কোথাও তাদের লাঞ্ছিত ও বিধ্বস্ত হতে হয়নি। নিজেদের বিপুল ধনাঢ্যতা সত্ত্বেও কোথাও তাদের সম্মানের চোখে দেখা হয় না। আর সবচাইতে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন জাতির জন্ম হয় তারপর তারা খতম হয়ে যায় কিন্তু এ জাতিটির মৃত্যু হচ্ছে না। একে দুনিয়ায় তাদের لايموت فيها ولا يحيى অর্থাৎ ‘না জীবিত না মৃত’-জীবন্মৃত অবস্থার শাস্তি দেয়া হয়। এ জাতিটি যাতে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির জন্য একটি জীবন্ত শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয় এবং নিজের সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে এ শিক্ষাদান করতে থাকে যে, আল্লাহর কিতাব বগলে দাবিয়ে রেখে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা উঁচু করার পরিণাম এমনিই হয়ে থাকে-এটিই হচ্ছে এ জাতিটিকে জীবন্মৃত অবস্থায় টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য। আর আখেরাতের আযাব হবে ইনশাআল্লাহ এর চাইতেও বেশী কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক। (এ আলোচনার পর ফিলিস্তিনের ইসরাঈল রাষ্ট্রটি সম্পর্কে লোকদের মনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্য আলে ইমরানের ১১২ আয়াত দেখুন)।