فَلِذَٰلِكَ فَٱدْعُ ۖ وَٱسْتَقِمْ كَمَآ أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ ۖ وَقُلْ ءَامَنتُ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِن كِتَـٰبٍۢ ۖ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ۖ ٱللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ۖ لَنَآ أَعْمَـٰلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَـٰلُكُمْ ۖ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ۖ ٱللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا ۖ وَإِلَيْهِ ٱلْمَصِيرُ
যেহেতু এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাই হে মুহাম্মাদ এখন তুমি সেই দ্বীনের দিকেই আহবান জানাও এবং যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছো সেভাবে দৃঢ়তার সাথে তা আঁকড়ে ধরো এবং এসব লোকের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করো না। ২৬ এদের বলে দাও, “আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার ওপর ঈমান এনেছি। ২৭ আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন তোমাদের মধ্যে ইনসাফ করি। ২৮ আল্লাহই আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব তিনিই। আমাদের কাজকর্ম আমাদের জন্য আর তোমাদের কাজকর্ম তোমাদের জন্য। ২৯ আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোন বিবাদ নেই। ৩০ একদিন আল্লাহ আমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন। তাঁর কাছেই সবাইকে যেতে হবে।”
২৬
অর্থাৎ তাদেরকে সন্তুষ্টি করার জন্য এই দ্বীনের মধ্যে কোন রদবদল ও হ্রাস-বৃদ্ধি করবে না। “কিছু নাও এবং কিছু দাও” এই নীতির ভিত্তিতে এই পথভ্রষ্ট লোকদের সাথে কোন আপোষ করো না। শুধু কোন না কোন ভাবে ইসলামের গণ্ডির মধ্যে এসে যাক, এ লোভের বশবর্তী হয়ে এদের কুসংস্কার ও গোঁড়ামি এবং জাহেলী আচার-আচরণের জন্য দ্বীনের মধ্যে কোন অবকাশ সৃষ্টি করো না। আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে যেভাবে নাযিল করেছেন কেউ মানতে চাইলে সেই খাঁটি ও মূল দ্বীনকে যেন সরাসরি মেনে নেয়। অন্যথায় যে জাহান্নামে হুমড়ি খেয়ে পড়তে চায় পড়ুক। মানুষের ইচ্ছানুসারে আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করা যায় না। মানুষ যদি নিজের কল্যাণ চায় তাহলে যেন নিজেকেই পরিবর্তন করে দ্বীন অনুসারে গড়ে নেয়।
২৭
অন্য কথায় আমি সেই বিভেদ সৃষ্টিকারী লোকদের মত নই যারা আল্লাহর প্রেরিত কোন কোন কিতাব মানে আবার কোন কোন কিতাব মানে না। আমি আল্লাহর প্রেরিত প্রতিটি কিতাবই মানি।
২৮
এই ব্যাপকার্থক আয়াতাংশের কয়েকটি অর্থ হয়ঃ একটি অর্থ হচ্ছে, আমি এসব দলাদলি থেকে দূরে থেকে নিরপেক্ষ ন্যায় নিষ্ঠা অবলম্বনের জন্য আদিষ্ট। কোন দলের স্বার্থে এবং দলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করা আমার কাজ নয়। সব মানুষের সাথে আমার সমান সম্পর্ক। আর সে সম্পর্ক হচ্ছে ন্যায় বিচার ও ইনসাফের সম্পর্ক। যার যে বিষয়টি ন্যায় ও সত্য সে যত দূরেরই হোক না কেন আমি তার সহযোগী। আর যার যে বিষয়টি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী সে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও আমি তার বিরোধী।
দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আমি তোমাদের সামনে যে সত্য পেশ করার জন্য আদিষ্ট তাতে কারো জন্য কোন বৈষম্য নেই, বরং তা সবার জন্য সমান। তাতে নিজের ও পরের, বড়র ও ছোটর, গরীবের ও ধনীর, উচ্চের ও নীচের ভিন্ন ভিন্ন সত্য নেই। যা সত্য তা সবার জন্য সত্য। যা গোনাহ তা সবার জন্য গোনাহ। যা হারাম তা সবার জন্য হারাম এবং যা অপরাধ তা সবার জন্য অপরাধ। এই নির্ভেজাল বিধানে আমার নিজের জন্যও কোন ব্যতিক্রম নেই।
তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, আমি পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিষ্ট। মানুষের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করা এবং তোমাদের জীবনে ও তোমাদের সমাজে যে ভারসাম্যহীনতা ও বে-ইনসাফী রয়েছে তার ধ্বংস সাধনের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে।
এ তিনটি অর্থ ছাড়া এ বাক্যাংশের আরো একটি অর্থ আছে যা পবিত্র মক্কায় প্রকাশ পায়নি কিন্তু হিজরতের পরে তা প্রকাশ পায়। সেটি হচ্ছে, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত বিচারক। তোমাদের মধ্যে ইনসাফ করা আমার দায়িত্ব।
২৯
আমাদের প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কাজের জন্য দায়ী এবং জবাবদিহিকারী। তোমরা নেক কাজ করলে তার সুফল আমি ভোগ করবো না, তোমরাই তা ভোগ করবে। অনুরূপ আমি খারাপ কাজ করলে সেজন্য তোমাদের পাকড়াও করা হবে না, আমাকেই তার পরিণাম ভোগ করতে হবে। একথাটিই ইতিপূর্বে সূরা বাকারা ১৩৯ আয়াত, সূরা ইউনূসের ৪১ আয়াত, সূরা হূদের ৩৫ আয়াত এবং সূরা কাসাসের ৫৫ আয়াতে বলা হয়েছে। দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা বাকারা, টীকা ১৩৯, সূরা ইউনুস টীকা ৪৯, সূরা হূদ, টীকা-৩৯ সূরা আল কাসাস, আয়াত ৫৫, টীকা ৭৯।
৩০
অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত দলীল-প্রমাণ দিয়ে কথা বুঝানোর যে দায়িত্ব আমার ছিল তা আমি পালন করেছি। এখন অযথা ঝগড়া-বিবাদ করে লাভ কি? তোমরা ঝগড়া-বিবাদ করলেও আমি তা করতে প্রস্তুত নই।