এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সত্য যা এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে বলা হয়েছে। এটিকে বিস্তারিতভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ তা প্রত্যেক মানুষকে তার ভূমিকা নির্ধারণে সাহায্য করে। যারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের জন্য চেষ্টা-সাধনা ও কাজ করে এ আয়াতে তাদেরকে এমন কৃষকের সাথে তুলনা করা হয়েছে যারা ভূমি প্রস্তুত করা থেকে ফসল প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত উপর্যুপরি ঘাম ঝরায় এবং প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায়। সে মাঠে যে বীজ বপন করছে তার ফসল আহরণ করে যেন উপকৃত হতে পরে সেজন্য সে এত সব পরিশ্রম করে কিন্তু নিয়ত ও উদ্দেশ্যের পার্থক্য এবং বেশীর ভাগই কর্মপদ্ধতির পার্থক্য ও আখেরাতের ফসল বপনকারী কৃষক এবং পার্থিব ফসল বপনকারী কৃষকের মধ্যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করে তাই আল্লাহ উভয় পরিশ্রমের ফলাফলও ভিন্ন রেখেছেন। অথচ এই পৃথিবীই উভয়ের কর্মক্ষেত্র।
আখেরাতের ফসল বপনকারী দুনিয়া লাভ করবে না আল্লাহ তা বলেননি। কম বা বেশী যাই হোক না কেন দুনিয়া তো সে পাবেই। কারণ এখানে আল্লাহর মেহেরবানী সবার জন্য সমান এবং তার মধ্যে তারও অংশ আছে। তাই ভালমন্দ সবাই এখানে রিযিক পাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তাকে দুনিয়া লাভের সুসংবাদ দান করেননি, বরং তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন এই বলে যে তার আখেরাতের কৃষিক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হবে। কেননা সে সেটিই চায় এবং সেখানকার পরিণামের চিন্তায় সে বিভোর। এই কৃষিক্ষেত্র বর্ধিত করার অনেকগুলো উপায় ও পন্থা হতে পারে। যেমনঃ সে যতটা সদুদ্দেশ্য নিয়ে আখেরাতের জন্য নেক আমল করতে থাকবে তাকে তত বেশী নেক আমল করার সুযোগ দেয়া হবে এবং তার হৃদয়-মন নেক কাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। যখন সে পবিত্র উদ্দেশ্যের জন্য পবিত্র উপায় অবলম্বন করার সংকল্প করবে তখন তার জন্য পবিত্র উপায়-উপকরণের মধ্যে বরকত দান করা হবে। তার জন্য কল্যাণের সব দরজা বন্ধ হয়ে কেবল অকল্যাণের দরজাসমূহই খোলা থাকবে, আল্লাহ এ অবস্থা কখনো আসতে দেবেন না। তাছাড়া সব চেয়ে বড় কথা হলো তার এই পৃথিবীর সামান্য নেকীও আখেরাতে কমপক্ষে দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আর বেশীর তো কোন সীমাই থাকবে না। আল্লাহ যার জন্য চাইবেন হাজার বা লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।
এখন থাকে দুনিয়ার কৃষি বপনকারীর কথা। অর্থাৎ যে আখেরাত চায় না এবং দুনিয়ার জন্যই সব কিছু করে। আল্লাহ তাকে তার এই চেষ্টা-সাধনার দু’টি ফলের কথা সুস্পষ্টভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন। এক, সে যত চেষ্টাই করুক না কেন দুনিয়া যতটা অর্জন করতে চায় তা সে পুরাপুরি পাবে না, বরং তার একটা অংশ মাত্র অর্থাৎ আল্লাহ তার জন্য যতটা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন ততটাই পাবে। দুই, সে যা কিছু পাবে এই দুনিয়াতেই পাবে। আখেরাতের কল্যাণে তার কোন অংশ থাকবে না।