بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَـٰلَهُمْ
যারা কুফরী করেছে ১ এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিয়েছে ২ আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজ-কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন। ৩
১
অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ ﷺ যে শিক্ষা ও পথনির্দেশনা পেশ করেছেন তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।
২
মূল আয়াতে
صَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ বলা হয়েছে।
صَد শব্দটি আরবী ভাষায় সকর্মক ও অকর্মক উভয় ক্রিয়াপদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। তাই এ আয়াতাংশের একটি অর্থ হচ্ছে, তারা নিজেরা আল্লাহর পথে আসা থেকে বিরত থেকেছে এবং আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা অন্যদের আল্লাহর পথে আসতে বাধা দিয়েছে।
অন্যদের আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়ার বহু উপায় ও পন্থা আছে। এর একটি পন্থা হলো, জোরপূর্বক কাউকে ঈমান গ্রহণ থেকে বিরত রাখা। দ্বিতীয় পন্থা হলো ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর এমন জুলুম-নির্যাতন চালানো যে, তার পক্ষে ঈমানের ওপর টিকে থাকা এবং এরূপ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অন্যদের ঈমান গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় পন্থা হলো, সে নানা উপায়ে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং হৃদয় মনে এমন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করবে যার দ্বারা মানুষ এ দ্বীন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করবে। এছাড়াও প্রত্যেক কাফের ব্যক্তিই এ অর্থে আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে, সে তার সন্তান-সন্ততিকে কুফরী রীতিনীতি অনুসারে লালন-পালন করে এবং এ কারণে তার ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়। একইভাবে প্রতি কুফরী সমাজ আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী একটি জগদ্দল পাথরের মত। কারণ, এ সমাজ তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দ্বারা তার সমাজ ব্যবস্থা ও রীতিনীতি এবং সংকীর্ণতা দ্বারা ন্যায় ও সত্য দ্বীনের প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
৩
মূল আয়াতে أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের কাজ-কর্মকে বিপথগামী করে দিয়েছেন, পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন ধ্বংস বা পণ্ড করে দিয়েছেন। একথাটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে তাদের চেষ্টা ও শ্রম সঠিক পথে ব্যয়িত হওয়ার তাওফীক ছিনিয়ে নিয়েছেন। এখন থেকে যে কাজই তারা করবে তা ভ্রান্ত উদ্দেশ্যে ভ্রান্ত পন্থায়ই করবে। আর তাদের সকল চেষ্টা-সাধনা হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীর পথেই ব্যয়িত হবে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তারা নিজেদের ধারণায় যে কাজ ভাল মনে করে আঞ্জাম দিয়ে আসছে যেমনঃ কা’বা ঘরের তত্ত্বাবধান, হাজীদের খেদমত, মেহমানদের আপ্যায়ন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা এবং অনুরূপ আরো যেসব কাজকে আরবে ধর্মীয় সেবা এবং উন্নত নৈতিক কাজের মধ্য গণ্য করা হতো, তা সব আল্লাহ তা’আলা ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা তার কোন প্রতিদান ও সওয়াব পাবে না। কারণ, যখন তারা আল্লাহর তাওহীদ এবং শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদতের পথ অবলম্বন করতে অস্বীকৃতি জানায় আর অন্যদেরকেও এ পথে আসতে বাধা দেয় তখন তাদের কোন কাজই আল্লাহর কাছে গৃহীত হতে পারে না। তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, ন্যায় ও সত্যের পথকে বন্ধ করতে এবং নিজেরদের কুফরভিত্তিক ধর্মকে আরবের বুকে জীবিত রাখার জন্য তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যে চেষ্টা-সাধনা চালাচ্ছে আল্লাহ তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এখন তাদের সমস্ত কৌশল একটি লক্ষহীন তীরের মত প্রমাণিত হয়েছে। এসব কৌশল দ্বারা তারা কখনো নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে না।