بَلْ كَذَّبُوا۟ بِٱلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ فَهُمْ فِىٓ أَمْرٍۢ مَّرِيجٍ
এসব লোকেরা তো এমন যে, যখনই তাদের কাছে সত্য এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা মনে করেছে। এ কারণেই তারা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে আছে। ৫
৫
এ সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশটিতে একটি অতি বড় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ তারা শুধু বিস্ময় প্রকাশ করা এবং বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী ঠাওরানোকেই যথেষ্ট মনে করেনি। বরং যে সময় মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর সত্যের দাওয়াত পেশ করেছেন সে সময় তারা কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই তাকে নির্জলা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে। অবশ্যম্ভাবীরূপে তার যে ফল হওয়ার ছিল এবং হয়েছে তা হচ্ছে, এ দাওয়াত এবং এ দাওয়াত পেশকারী রসূলের ব্যাপারে এরা কখনো স্থির ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি। কখনো তাকে কবি বলে, কখনো বলে গণক কিংবা পাগল। কখনো বলে সে যাদুকর আবার কখনো বলে কেউ তাঁর ওপর যাদু করেছে। কখনো বলে নিজের বড়ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সে এ বাণী নিজে বানিয়ে এনেছে আবার কখনো অপবাদ আরোপ করে যে, অন্যকিছু লোক তার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারাই তাকে এসব কথা বানিয়ে দেয়। এসব পরস্পর বিরোধী কথাই প্রকাশ করে যে, তারা নিজেদের দৃষ্টিভংগী সম্পর্কেই পুরোপুরি দ্বিধান্বিত। যদি তারা তাড়াহুড়ো করে একেবারে প্রথমেই নবীকে অস্বীকার না করতো এবং কোন রকম চিন্তা-ভাবনা না করে আগেভাগেই একটি সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বে ধীরস্থিরভাবে একথা ভেবে দেখতো যে, কে এ দাওয়াত পেশ করছে, কি কথা বলছে এবং তাঁর দাওয়াতের স্বপক্ষে কি দলীল-প্রমাণ পেশ করছে তাহলে তারা কখনো এ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তো না। এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, তাদের কাছে ঐ ব্যক্তি অপরিচিত কেউ ছিল না। সে অন্য কোনখান থেকে আকস্মিকভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। সে তাদের স্বজাতিরই একজন সদস্য ছিল। তাদের জানা শোনা লোক ছিল। তারা তাঁর চরিত্র ও কর্ম যোগ্যতা সম্পর্কে অনবহিত ছিল না। এমন একজন মানুষের পক্ষ থেকে যখন একটি কথা পেশ করা হয়েছিল তখন সাথে সাথে তা গ্রহণ না করলেও শোনামাত্রই তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মতও ছিল না। তাছাড়া সেটি যুক্তি-প্রমাণহীন কথাও ছিল না। সে তার পক্ষে দলীল-প্রমাণ পেশ করেছিলো। তার প্রমাণাদি কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা খোলা কান দিয়ে শোনা এবং পক্ষপাতহীনভাবে যাঁচাই বাছাই করে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু এ নীতি গ্রহণ করার পরিবর্তে যখন তারা জিদের বশবর্তী হয়ে প্রথম পর্যায়েই তাঁকে অস্বীকার করে বসলো তখন তার ফল হলো এই যে, সত্য পর্যন্ত পৌঁছার একটি দরজা তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিল এবং চারদিকে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ানোর অনেক দরজা খুলে নিল। এখন তারা নিজেদের প্রাথমিক ভুলকে যুক্তিসিদ্ধ করার পর পরস্পর বিরোধী আরো অনেক কথা গড়তে পারে। কিন্তু তিনি সত্য নবীও হতে পারেন এবং তার পেশকৃত কথা সত্যও হতে পারে এ একটি কথা চিন্তা করে দেখার জন্যও তারা প্রস্তুত নয়।