এ তিনটি বিশেষ গুণের কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ‘মুত্তাকী ও মুহসিন’ বলে আখ্যায়িত করে বলছেন, এ গুণাবলীই তাদেকে জান্নাত লাভের অধিকারী বানিয়েছে।
প্রথম গুণটি হচ্ছে, তারা আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করেছেন এবং এমন প্রতিটি আচরণ বর্জন করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রসূল যাকে আখেরাতের জীবনের জন্য ধ্বংসাত্মক বলে বর্ণনা করেছিলেন। দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে, তারা নিজেদের জীবনপাত করে আল্লাহর বন্দেগীর হক আদায় করেছেন এবং সেজন্য অহংকার প্রকাশ করার পরিবর্তে ক্ষমা প্রার্থনাই করেছেন। তৃতীয় গুণটি হলো, তারা আল্লাহর বান্দাদের সেবা ইহসান মনে করে করেননি, বরং তাদের অধিকার ও নিজেদের কর্তব্য মনে করে করেছেন।
এখানে একথাটিও জেনে নেয়া দরকার যে, ঈমানদারদের অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের যে অধিকারের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তার অর্থ যাকাত নয় যা শরীয়াতের নির্দেশ অনুসারে তাদের ওপর ফরয করে দেয়া হয়েছে। যাকাত আদায় করার পরও আর্থিক সঙ্গিত সম্পন্ন একজন ঈমানদার তার অর্থ-সম্পদে অন্যদের যে অধিকার আছে বলে উপলব্ধি করে এবং শরীয়াত বাধ্যতামূলক না করে থাকলেও সে মনের একান্ত আগ্রহ সহকারে তা আদায় করে; এখানে সে অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ইবনে আব্বাস মুজাহিদ এবং যায়েদ ইবনে আসলাম প্রমুখ মনীষীগণ এ আয়াতটির এ অর্থই বর্ণনা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর এ বাণীটির সারকথা হলো, একজন মুত্তাকী ও পরোপকারী মানুষ কখনো এরূপ ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত হয় না যে, তার সম্পদে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার যে অধিকার ছিল যাকাত আদায় করে সে তা থেকে পুরোপুরি অব্যহতি লাভ করেছে। ভুখা, নাংগা ও বিপদগ্রস্ত প্রতিটি মানুষকেই সাধ্যমত সাহায্য করে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সে স্বীকার করে। আল্লাহর মুত্তাকী ও মুহসিন বান্দা তার সাধ্যমত পরোপকারমূলক কাজ করতে সর্বদা মনে প্রাণে প্রস্তুত থাকে এবং পৃথিবীতে নেক কাজ করার যে সুযোগই সে লাভ করে তা হাতছাড়া হতে দেয় না। সে কখনো এরূপ চিন্তা-ভাবনা করে না যে, যে নেক কাজ করা তার জন্য ফরয করে দেয়া হয়েছিলো তা সে সম্পাদন করেছে, এখন আর কোন নেক কাজ সে কেন করবে?
যে ব্যক্তি নেক কাজের মূল্য বুঝতে পেরেছে সে তা বোঝা মনে করে বরদাশত করে না, বরং নিজের লাভজনক ব্যবসায় মনে করে আরো অধিক উপার্জনের জন্য লালায়িত হয়ে পড়ে।