وَفِى ٱلْأَرْضِ ءَايَـٰتٌۭ لِّلْمُوقِنِينَ
দৃঢ় প্রত্যয় পোষণকারীদের জন্য পৃথিবীতে বহু নিদর্শন রয়েছে। ১৮
১৮
নিদর্শন অর্থ সেসব নিদর্শন যা আখেরাতের সম্ভাবনা এবং তার অবশ্যম্ভাবিতা ও অনিবার্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। পৃথিবীর অস্তিত্ব এবং তার গঠন ও আকার-আকৃতি সূর্য থেকে তাকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং বিশেষ কোণে স্থাপন, তার ওপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা করা, সেখানে বিভিন্ন মওসূম, ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার ওপর বাতাস ও পানি সরবরাহ করা, তার অভ্যন্তর ভাগে নানা রকমের অগণিত সম্পদের ভাণ্ডার সরবরাহ করা, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমের অসংখ্য ও অগণিত উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীট-পতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্ব দানের পূর্বে এমন সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা যা ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে কেবল তার দৈনন্দিন প্রয়োজনই পূরণ নয় বরং তার তাহযীব তামাদ্দুনে ক্রমবিবর্তনের ক্ষেত্রে সহযোগিতাও করতে থাকবে, এসব এবং এ ধরনের এত অগণিত নিদর্শনাদি আছে যে, চক্ষুষ্মান ব্যক্তি পৃথিবী ও এর পরিমণ্ডলে যে দিকেই দৃষ্টিপাত করে তা তার মনকে আকৃষ্ট করতে থাকে। যে ব্যক্তি তার বিবেক-বুদ্ধির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, কোনক্রমেই বিশ্বাস করতে চায় না, তার কথা ভিন্ন। সে এর মধ্যে আর সবকিছুই দেখতে পাবে। কিন্তু দেখবে না শুধু সত্যের প্রতি ইঙ্গিত প্রদানকারী কোন নিদর্শন। তবে যার হৃদয়-মন সংকীর্ণতা ও পক্ষপাত মুক্ত এবং সত্যের জন্য অবারিত ও উন্মুক্ত সে এসব জিনিস দেখে কখনো এ ধারণা পোষণ করবে না যে, এসবই কয়েকশ’ কোটি বছর পূর্বে বিশ্ব-জাহানে সংঘটিত একটি আকস্মিক মহা বিষ্ফোরণের ফল। বরং এসব দেখে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নত মানের এ বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহা শক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি। যে আল্লাহ এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি যেমন মৃত্যুর পরে পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করতে অক্ষম হতে পারেন না, তেমনি এমন নির্বোধ হতে পারেন না যে, তার পৃথিবীতে বুদ্ধি-বিবেক ও উপলব্ধির অধিকারী একটি সৃষ্টিকে স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দিয়ে লাগামহীন বলদের মত ছেড়ে দিবেন। স্বাধীনতা ও ইখতিয়ারের অধিকারী হওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত ও অনিবার্য দাবী হলো জবাবদিহি। জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে স্বাধীনতা ও এখতিয়ার যুক্তি ও ইনসাফের পরিপন্থী হবে। আর অসীম শক্তির বিদ্যমানতা স্বভাবতই একথা প্রমাণ করে যে, পৃথিবীতে মানবজাতির কাজ শেষ হওয়ার পর সে যেখানেই মরে পড়ে থাকুক না কেন যখন ইচ্ছা তার মহাশক্তিধর স্রষ্টা জবাবদিহির জন্য সমস্ত মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোণ থেকে পুনরুজ্জীবিত করে আনতে সক্ষম।