আয যারিয়াত

৬০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
২১ ) এবং তোমাদের সত্তার মধ্যেও। ১৯ তোমরা কি দেখ না?
وَفِىٓ أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ ٢١
২২ ) আসমানেই রয়েছে তোমাদের রিযিক এবং সে জিনিসও যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হচ্ছে। ২০
وَفِى ٱلسَّمَآءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ ٢٢
২৩ ) তাই আসমান ও যমীনের মালিকের শপথ, একথা সত্য এবং তেমনই নিশ্চিত যেমন তোমরা কথা বলছো।
فَوَرَبِّ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ إِنَّهُۥ لَحَقٌّ مِّثْلَ مَآ أَنَّكُمْ تَنطِقُونَ ٢٣
২৪ ) হে নবী, ২১ ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী কি তোমার কাছে পৌঁছেছে? ২২
هَلْ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَٰهِيمَ ٱلْمُكْرَمِينَ ٢٤
২৫ ) তারা যখন তার কাছে আসলো, বললোঃ আপনার প্রতি সালাম। সে বললোঃ “আপনাদেরকেও সালাম- কিছু সংখ্যক অপরিচিত লোক। ২৩
إِذْ دَخَلُوا۟ عَلَيْهِ فَقَالُوا۟ سَلَٰمًا قَالَ سَلَٰمٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ ٢٥
২৬ ) পরে সে নীরবে তার পরিবারের লোকদের কাছে গেল ২৪ এবং একটা মোটা তাজা বাছুর ২৫
فَرَاغَ إِلَىٰٓ أَهْلِهِۦ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ ٢٦
২৭ ) এনে মেহমানদের সামনে পেশ করলো। সে বললোঃ আপনারা খান না কেন?
فَقَرَّبَهُۥٓ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ ٢٧
২৮ ) তারপর সে মনে মনে তাদের ভয় পেয়ে গেল। ২৬ তারা বললোঃ ভয় পাবেন না। তাছাড়া তারা তাকে এক জ্ঞানবান পুত্র সন্তান জন্মের সুসংবাদ দিল। ২৭
فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا۟ لَا تَخَفْ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَٰمٍ عَلِيمٍ ٢٨
২৯ ) একথা শুনে তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে অগ্রসর হলো। সে আপন গালে চপেটাঘাত করে বললোঃ বুড়ী বন্ধ্যা। ২৮
فَأَقْبَلَتِ ٱمْرَأَتُهُۥ فِى صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ ٢٩
৩০ ) তারা বললোঃ তোমার রব একথাই বলেছেন। তিনি মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। ২৯
قَالُوا۟ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْحَكِيمُ ٱلْعَلِيمُ ٣٠
১৯.
অর্থাৎ বাইরে দেখারও প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই তুমি এ সত্য প্রমাণকারী অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কিভাবে একটি অণুবীক্ষণিক কীট এবং অনুরূপ একটি অণুবীক্ষণিক ডিম্বকে মিলিয়ে একত্রিত করে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকার সেই নিভৃত কোণে কিভাবে লালন পালন করে তোমাদেরকে ক্রমান্বয়ে বড় করা হয়েছে। কিভাবে তোমাদেরকে অনুপম আকৃতি ও কাঠামোর দেহ এবং বিস্ময়কর কর্মশক্তি সম্পন্ন প্রাণ শক্তি দেয়া হয়েছে। কিভাবে তোমাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই তাকে মাতৃগর্ভের সংকীর্ণ ও অন্ধকার জগত থেকে বের করে এ বিশাল ও বিস্তৃত জগতে এমন সময় আনা হয়েছে যখন তোমাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র তোমাদের জন্ম থেকে যৌবন ও বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য পরিপাক করা, রক্ত তৈরী করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ক্ষয়িত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা ভিতর থেকে উদ্ভূত কিংবা বাইরে থেকে আগমনকারী বিপদাপদসমূহের প্রতিরোধ করা, ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা এমনকি পরিশ্রান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত আপনা থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য তোমাদের মনোযোগ ও চেষ্টা-সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয়িত হয় না। তোমাদের মাথার খুলির মধ্যে একটা বিস্ময়কর মস্তিস্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞান-বুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাংখা, অনুভূতি, আবেগ, ঝোঁক ও প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভাণ্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তোমাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তোমাদেরকে সব রকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তোমাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তোমাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের ওপর তোমার আমিত্ব বা অহংকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পার যে, কোন্ পথে তোমাদের সময়, শ্রম ও চেষ্টা-সাধনা ব্যয় করতে হবে, কোন্টি বর্জন করতে হবে এবং কোন্টি গ্রহণ করতে হবে, কোন্ বস্তুকে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বানাতে হবে এবং কোন্টিকে নয়।

একটু লক্ষ্য করো এরূপ একটি সত্তা বানিয়ে তোমাদেরকে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই তোমাদের সত্তার লালন-পালন, প্রবৃদ্ধি উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য কত সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছো। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে তোমরা নিজেদের ক্ষমতা ইখতিয়ার কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছো।

এসব ক্ষমতা ইখতিয়ার কাজে লাগানোর জন্য পৃথিবীতে তোমাদেরকে নানা উপায়-উপকরণ দেয়া হয়েছে, সুযোগ দেয়া হয়েছে, বহু জিনিসের ওপর তোমাদের কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বহু মানুষের সাথে তোমরা নানা ধরনের আচরণ করেছো। তোমাদের সামনে কুফরী ও ঈমান, পাপাচার ও আনুগত্য, জুলুম ও ইনসাফ, নেকী ও কুকর্ম এবং হক ও বাতিলের সমস্ত পথ খোলা ছিল। এসব পথের প্রত্যেকটির দিকে আহ্বানকারী এবং প্রত্যেকটির দিকে নিয়ে যাওয়ার মত কার্যকারণসমূহ বিদ্যমান ছিল। তোমাদের মধ্যে যে-ই যেপথ বেছে নিয়েছে নিজের দায়িত্বেই বেছে নিয়েছে। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাছাই করার ক্ষমতা তার মধ্যে পূর্ব থেকেই দেয়া হয়েছিলো। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার নিয়ত ও ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ কুফরী, শিরক ও নাস্তিকতার পথ গ্রহণ করেছে। কেউ তার প্রবৃত্তিকে অবৈধ আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছে আর কেউ প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে গিয়ে সবকিছু করে বসেছে। কেউ জুলুম করেছে আর কেউ জুলুম বরদাশত করেছে। কেউ অধিকার দিয়েছে আর কেউ অধিকার নস্যাত করেছে। কেউ মৃত্যু পর্যন্ত পৃথিবীতে কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের ওপর জুলুম চালিয়ে গেছে।

এমন কোন ব্যক্তি যার বিবেকের চোখে একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়নি সে কি একথা বলতে পারে যে, এ ধরনের একটি সত্তা আকস্মিকভাবে পৃথিবীতে অস্তিত্ব লাভ করেছে? এর পেছনে কোন যুক্তি ও পরিকল্পনা কার্যকর নেই? তার হাতে পৃথিবীতে যেসব কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তা সবই ফলাফল এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যহীনভাবে শেষ হয়ে যাবে? কোন ভাল কাজের ভাল ফল এবং কোন মন্দ কাজের মন্দ ফল নেই? কোন জুলুমের কোন প্রতিকার এবং কোন জালেমের কোন জবাবদিহি নেই? যুক্তিবুদ্ধির ধার ধারে না এমন লোকই কেবল এ ধরনের কথা বলতে পারে। কিংবা বলতে পারে এমন লোক যে আগে থেকেই শপথ করে বসে আছে যে, মানব সৃষ্টির পেছনে যত বড় বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য থাকার কথা বলা হোক, তা অস্বীকার করতেই হবে। কিন্তু গোঁড়ামী ও সংকীর্ণতামুক্ত একজন লোকের পক্ষে একথা না মেনে উপায় নেই যে, মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে এখানে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন তার বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজ-কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই ঠিক নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মত একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।

২০.
এখানে আসমান অর্থ উর্ধ্বজগত। মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার এবং কাজ করার জন্য যা কিছু দেয়া হয় রিযিক অর্থে তার সবকিছুই বুঝায়। আর সমস্ত আসমানী কিতাব ও এ কুরআন কিয়ামত হাশর ও পুনরুত্থান, হিসেব-নিকেশ ও জবাবদিহি, পুরস্কার ও শাস্তি এবং জান্নাত ও জাহান্নামের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে مَا تُوعَدُونَ বলে সেসবকেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হচ্ছে দুনিয়ায় তোমাদের কাকে কি দিতে হবে তার ফায়সালা ঊর্ধ্বজগত থেকেই হয়। তাছাড়া জবাবদিহি ও কর্মফল দেয়ার জন্য কখন তলব করা হবে সে ফায়সালাও সেখান থেকেই হবে।
২১.
এখান থেকে দ্বিতীয় রুকূ’র শেষ পর্যন্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং কিছু সংখ্যক অতীত জাতির পরিণতির প্রতি একের পর এক সংক্ষিপ্তভাবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য মানুষের মনে দু’টি জিনিস বদ্ধমূল করে দেয়া।

একটি হচ্ছে, মানব ইতিহাসে আল্লাহর প্রতিদানের বিধান সবসময় কার্যকর আছে। এ বিধানে নেককারদের জন্য পুরস্কার এবং জালেমদের জন্য শাস্তির দৃষ্টান্ত সবসময় কার্যকর দেখা যায়। এটি এ বিষয়ের স্পষ্ট প্রমাণ যে, এ পার্থিব জীবনেও মানুষের সাথে তার স্রষ্টার আচরণ কেবল প্রাকৃতিক বিধান (Physical Law) অনুসারে হয় না, বরং তার সাথে নৈতিক বিধানও (Moral Law) সক্রিয়। তাছাড়া এ গোটা বিশ্ব-জাহান সাম্রাজ্যের স্বভাবই যখন এই যে, যে সৃষ্টিকে বস্তুগত দেহে অবস্থান করে নৈতিক কাজ-কর্মের সুযোগ দেয়া হয়েছে তার সাথে পশু ও উদ্ভিদরাজির মত কেবল প্রাকৃতিক বিধান অনুসারে আচরণ করা হবে না, বরং তার নৈতিক কাজ-কর্মের ওপর নৈতিক প্রতিফলের বিধানও কার্যকর করা হবে তখন এ দ্বারা স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, এ সাম্রাজ্যে এমন একটা সময় অবশ্যই আসতে হবে যখন এ প্রাকৃতিক জগতে মানুষের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিরেট নৈতিক আইনানুসারে তার নৈতিক কাজ-কর্মের ফলাফল পূর্ণরূপে প্রকাশ পাবে। কারণ এ বস্তুজগতে তা পূর্ণরূপে প্রকাশ পেতে পারে না।

এ ঐতিহাসিক ইঙ্গিতসমূহের মাধ্যমে দ্বিতীয় যে জিনিসটি মানুষের মনে বদ্ধমূল করানো হয়েছে তা হচ্ছে, যেসব জাতিই আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের কথা মানেনি এবং নিজেদের জীবনের গোটা আচরণ তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত অস্বীকৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছে শেষ পর্যন্ত তারা ধ্বংসের উপযুক্ত হয়ে গিয়েছে। নবী-রসূলের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে এবং সে বিধানানুসারে আখেরাতে মানুষের কাজ-কর্মের যে জবাবদিহি করতে হবে তা যে বাস্তব ও সত্য ইতিহাসের এ নিরবচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতাই তার সাক্ষী। কারণ যে জাতিই এ বিধানে তোয়াক্কা না করে নিজেকে দায়িত্ব ও জবাবদিহি মুক্ত মনে করে এ পৃথিবীতে তার করণীয় নির্ধারণ করেছে পরিণামে সে জাতি সরাসরি ধ্বংসের পথের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

২২.
ইতিপূর্বে কুরআন মজীদের তিনটি স্থানে এ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হূদ, ৬৯ থেকে ৭৬ আয়াত; সূরা আল হিজর, আয়াত ৫১ থেকে ৬০; সূরা আল আনকাবূত, আয়াত ৩১ ও ৩২ টীকাসহ।
২৩.
পূর্বাপর প্রসঙ্গ অনুসারে এ আয়াতাংশের দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজেই সে মেহমানদের বলেছিলেন যে, পূর্বে কখনো আপনাদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়নি। আপনার হয়তো এ এলাকায় নতুন এসেছেন। অপরটি হচ্ছে, তাদের সালামের জবাব দেয়ার পর হযরত ইবরাহীম মনে মনে বললেন কিংবা বাড়ীতে মেহেমানদারীর ব্যবস্থা করার জন্য যাওয়ার সময় তাদের খাদেমদের বললেন, এরা অপরিচিত লোক। আগে কখনো এ এলাকায় এরূপ জাঁকজমক ও বেশভুষার লোক দেখা যায়নি।
২৪.
অর্থাৎ নিজের মেহেমানদের একথা বলেননি যে, আপনাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বরং তাদেরকে বসিয়ে রেখে নীরবে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চলে গিয়েছেন যাতে মেহমান সৌজন্যের খাতিরে একথা না বলে যে, এ কষ্ট স্বীকারের প্রয়োজন কি?
২৫.
সূরা হুদে عِجْلٍ حَنِيذٍ (ভূনা বাছুর) কথাটি আছে। এখানে বলা হয়েছে যে, তিনি ভালভাবে বাছাই করে মোটা তাজা গো-বৎস ভূনা করিয়েছিলেন।
২৬.
অর্থাৎ তাদের হাত যখন খাবারের দিকে এগুলো না, তখন ইবরাহীমের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। গোত্রীয় জীবনধারায় কারো বাড়ীতে অপরিচিত মুসাফিরের খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা কোন অসদুদ্দেশ্যে আগমনের লক্ষণ বলে মনে করা হয়। এটাও তাঁর ভয়ের একটা কারণ হতে পারে। তবে খুব সম্ভব, খাবার গ্রহণ থেকে তাদের বিরত থাকাতেই হযরত ইবরাহীম বুঝে ফেলেছিলেন যে, তারা ফেরেশতা, মানুষের রূপ ধরে এখানে এসেছে। তাছাড়া মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতাদের আগমন যেহেতু অস্বাভিবক পরিস্থিতিতেই হয়ে থাকে তাই তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, কোন ভয়ংকর পরিস্থিতি আসন্ন, যার কারণে এসব ফেরেশতা এভাবে আগমন করেছে।
২৭.
সূরা হূদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এটা ছিল হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ। এর মধ্যে এ সুসংবাদও আছে যে, হযরত ইসহাকের ঔরসে তিনি হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালামের মত নাতিও লাভ করবেন।
২৮.
অর্থাৎ একদিকে আমি বুড়ী অপর দিকে বন্ধ্যা। এমন অবস্থায় আমার সন্তান হবে? বাইবেলে বলা হয়েছে, সে সময় হযরত ইবরাহীমের বয়স ছিল এক’শ বছর এবং হযরত সারার বয়স ছিল ৯০ বছর। (আদি পুস্তক, ১৮: ১৭)
২৯.
এ কাহিনী বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর যে বান্দা দুনিয়ায় আল্লাহর বন্দেগীর হক যথাযথভাবে আদায় করেছিল আখেরাতে তার সাথে যে আচরণ হবার তাতো হবেই। এ দুনিয়াতেও তাকে এভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে যে, সাধারণ প্রাকৃতিক বিধান অনুসারে যে বয়সে সন্তান হওয়ার কথা ছিল না এবং তার স্ত্রীও সারা জীবন নিঃসন্তান থেকে চূড়ান্তভাবে নিরাশ হয়ে পড়েছিলো সেই বয়সে আল্লাহ‌ তাকে সন্তান দান করেছেন শুধু তাই নয় এমন নজীরবিহীন সন্তান দান করেছেন যা আজ পর্যন্ত কারো ভাগ্যে জোটেনি। এ পৃথিবীতে দ্বিতীয় এমন কোন মানুষ নেই যার বংশ পর পর চারজন নবী জন্মলাভ করেছেন। হযরত ইবরাহীমই (আ) ছিলেন এমন ব্যক্তিত্ব যার বংশে অধস্তন তিন পুরুষ পর্যন্ত নবুওয়াতের ধারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলেছিলো এবং তার পরিবারেই হযরত ইসমাঈল, হযরত ইসহাক, হযরত ইয়া’কুব এবং হযরত ইউসূফ আলাইহিমুস সালামের মত মহা সম্মানিত নবীদের জন্ম হয়েছিলো।
অনুবাদ: