এসব ব্যবহারের দিক লক্ষ্য করে তাফসীরকারদের মধ্যে কেউ কেউ এ আয়াতের لمم শব্দের অর্থ গ্রহণ করেছেন ছোট গোনাহ। কেউ কেউ এর অর্থ বলেছেন যে, ব্যক্তির কার্যত বড় গোনাহের নিকবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তাতে লিপ্ত না হওয়া। কেউ কেউ একে ক্ষণিকের জন্য গোনাহে লিপ্ত হয়ে পরে তা থেকে বিরত হওয়া অর্থে গ্রহণ করেছেন। কারো কারো মতে এর অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তি গোনাহের কল্পনা, ইচ্ছা কিংবা সংকল্প করবে ঠিকই কিন্তু কার্যত কোন পদক্ষেপ নেবে না। এ বিষয়ে সাহাবা ও তাবেয়ীদের মতামত নিম্নরূপঃ
যায়েদ ইবনে আসলাম ও ইবনে যায়েদ বলেনঃ এর অর্থ মানুষ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে জাহেলী যুগে যেসব গোনাহ করেছে, কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তা পরিত্যাগ করেছে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের (রাঃ) একটি মতও তাই।
ইবনে আব্বাসের (রাঃ) দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে, ব্যক্তির কোন বড় গোনাহ বা অশ্লীল কাজে অল্প সময়ের জন্য কিংবা ভুলক্রমে কখনো লিপ্ত হয়ে পড়া এবং পরে তা পরিত্যাগ করা। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ্ (রাঃ) ইবনে আমর ইবনে আস, মুজাহিদ (রাঃ) হাসান বাসরী (রঃ) এবং আবু সালেহের (রঃ) মতও তাই।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ), মাসরূক এবং শা’বী বলেনঃ এর অর্থ কোন ব্যক্তির কোন বড় গোনাহের নিকটবর্তী হওয়া এবং তার প্রাথমিক পর্যায়সমূহ অতিক্রম করা কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়ে বিরত থাকা। যেমনঃ কেউ চুরি করার উদ্দেশ্যে বের হলো কিন্তু চুরি করা থেকে বিরত থাকলো। কিংবা পরনারীর সাথে মেলামেশা করলো কিন্তু ব্যভিচার করতে অগ্রসর হলো না। নির্ভরযোগ্য বর্ণনা সূত্রে হযরত আবু হুরাইরা এবং আবদুল্লাহ্ আব্বাস থেকেও এ মতটি উদ্ধৃত হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবায়ের, ইকরিমা, কাতাদা এবং দাহহাক বলেনঃ এর অর্থ এমন ছোট ছোট গোনাহ যার জন্য দুনিয়াতে কোন শাস্তি নির্দিষ্ট করা হয়নি এবং আখেরাতেও আযাব দেয়ার কোন ভয় দেখানো হয়নি।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব বলেনঃ এর অর্থ মনে গোনাহের চিন্তার উদ্রেক করা কিন্তু কার্যত তাতে লিপ্ত না হওয়া।
এগুলো হচ্ছে, সম্মানিত সাহাবা ও তাবেয়ীদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা যা বিভিন্ন রেওয়ায়াতে উদ্ধৃত হয়েছে। পরবর্তী তাফসীরকার, ইমাম ও ফিকাহবিদদের অধিকাংশই এ মত পোষণ করেন, যে এ আয়াত এবং সূরা নিসার ৩১ আয়াত সুস্পষ্টরূপে গোনাহকে সগীরা ও কবীরা এই দু’টি বড় ভাগে বিভক্ত করেছে। এ দু’টি আয়াত মানুষকে আশান্বিত করে যে, তারা যদি বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাদের ছোট ছোট্ গোনাহ মাফ করে দেবেন। যদিও দুয়েকজন বড় আলেম মত প্রকাশ করেছেন যে, কোন গোনাহই ছোট নয়। আল্লাহর অবাধ্যতা মাত্রই বড় গোনাহ। কিন্তু ইমাম গাযযালী (রঃ) বলেছেনঃ কবীরা ও সগীরা গোনাহের পার্থক্য এমন একটি বিষয় যা অস্বীকার করা যায় না। কারণ, যেসব উৎস থেকে শরীয়াতের হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করা যায় তার সবগুলোতেই এর উল্লেখ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সগীরা ও কবীরা গোনাহর মধ্যে পার্থক্য কি? এবং কি ধরনের গোনাহ সগীরা আর কি ধরনের গোনাহ কবীরা? এ ব্যাপারে কবীরা ও সগীরা গোনাহর যে সংজ্ঞায় আমরা পূর্ণরূপে নিশ্চিত ও পরিতৃপ্ত তা হচ্ছে, “যে গোনাহকে কিতাব ও সুন্নাহর কোন সুস্পষ্ট উক্তিতে হারাম বলা হয়েছে অথবা যে গোনাহর জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূল দুনিয়াতে কোন শাস্তি নির্দিষ্ট করেছেন অথবা যে গোনাহের কারণে আখেরাতের আযাবের ভয় দেখিয়েছেন বা অভিশাপ দিয়েছেন অথবা তাতে লিপ্ত ব্যক্তির ওপর আযাব নাযিলের খবর দিয়েছেন।” এ ধরনের সমস্ত গোনাহই কবীরা গোনাহ। এ প্রকৃতির গোনাহ ছাড়া শরীয়াতের দৃষ্টিতে আর যত রকমের অপছন্দনীয় কাজ আছে তার সবই সগীরা গোনাহের সংজ্ঞায় পড়ে। একই ভাবে কেবলমাত্র গোনাহের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা কিংবা ইচ্ছা করাও কাবীরা গোনাহ নয়, সগীরা গোনাহ। এমন কি কোন বড় গোনাহের প্রাথমিক পর্যায়সমূহ অতিক্রম করাও ততক্ষণ পর্যন্ত কাবীরা গোনাহ নয় যতক্ষণ না ব্যক্তি কার্যত তা করে বসবে। তবে সগীরা গোনাহও যখন ইসলামী বিধানকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়, আল্লাহ তা’আলার মোকাবিলায় অহংকারের মনোবৃত্তি নিয়ে করা হয় এবং যে শরীয়াত একে খারাপ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে তাকে আদৌ গুরুত্ব দেয়ার উপযুক্ত মনে করা না হয় তখন তা কবীরা গোনাহে রূপান্তরিত হয়।