وَمَا قَدَرُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِۦٓ إِذْ قَالُوا۟ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٍۢ مِّن شَىْءٍۢ ۗ قُلْ مَنْ أَنزَلَ ٱلْكِتَـٰبَ ٱلَّذِى جَآءَ بِهِۦ مُوسَىٰ نُورًۭا وَهُدًۭى لِّلنَّاسِ ۖ تَجْعَلُونَهُۥ قَرَاطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًۭا ۖ وَعُلِّمْتُم مَّا لَمْ تَعْلَمُوٓا۟ أَنتُمْ وَلَآ ءَابَآؤُكُمْ ۖ قُلِ ٱللَّهُ ۖ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِى خَوْضِهِمْ يَلْعَبُونَ
তারা আল্লাহ সম্পর্কে বড়ই ভুল অনুমান করলো যখন তারা বললো, আল্লাহ কোন মানুষের ওপর কিছুই নাযিল করেননি। ৫৯ তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে মূসা যে কিতাবটি এনেছিল, যা ছিল সমস্ত মানুষের জন্য আলো ও পথ নির্দেশনা, যাকে তোমরা খণ্ড বিখণ্ড করে রাখছো, কিছু দেখাও আর কিছু লুকিয়ে রাখো এবং যার মাধ্যমে তোমাদের এমন জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তোমাদেরও ছিল না, তোমাদের বাপ-দাদাদেরও ছিল না।---কে তা নাযিল করেছিল ৬০ কেবল এতটুকুই বলে দাওঃ আল্লাহ, তারপর তাদেরকে তাদের যুক্তিবাদের খেলায় মেতে থাকতে দাও।
৫৯
আগের ধারাবাহিক বর্ণনা ও পরবর্তী জওয়াবী ভাষণ থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি ছিল ইহুদীদের উক্তি। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাবী ছিল, আমি নবী এবং আমার কাছে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবে কুরাইশ কাফের সম্প্রদায় এবং আরবের অন্যান্য মুশরিকরা এ দাবীর যথার্থতা অনুসন্ধান করার জন্য ইহুদী ও খৃস্টানদের কাছে যেতো এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করতো, তোমরাও তো নবী-রসূলদের মানো, বলো সত্যিই কি এ ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কালাম নাযিল হয়েছে। এর জওয়াবে তারা যা বলতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কট্টর বিরোধী পক্ষ বিভিন্ন জায়গায় সে কথাগুলো বলে বলে লোকদেরকে বিভ্রান্ত ও উত্তেজিত করতো। তাই ইসলাম বিরোধীরা ইহুদীদের যে উক্তিটিকে প্রমাণ হিসেবে খাড়া করেছিল সেটি এখানে উদ্ধৃত করে তার জওয়াব দেয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন করা যেতে পারে, তাওরাতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল করা কিতাব বলে মানে, এমন একজন ইহুদী কেমন করে বলতে পারে যে, আল্লাহ কোন মানুষের কাছে কিছুই নাযিল করেননি? কিন্তু এখানে এ প্রশ্নটি যথার্থ নয়। কারণ গোয়ার্তুমি ও হঠকারীতার বশবর্তী হয়ে অনেক সময় মানুষ অন্যের সত্য বক্তব্য অস্বীকার করতে গিয়ে এমন সব কথাও বলে ফেলে যা তার নিজের স্বীকৃত সত্যের পরিপন্থী হয়। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রত্যাখ্যান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। ফলে বিরোধিতার জোশে তারা এমনই অন্ধ হয়ে পড়েছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের প্রতিবাদ করতে করতে তারা এক সময় মূল রিসালাতকেই অস্বীকার করে বসে।
আর এখানে যে বলা হয়েছে, “তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বড়ই ভুল অনুমান করলো যখন তারা বললো”, এর অর্থ হচ্ছে, তারা আল্লাহর কুশলতা বিচক্ষণতা ও ক্ষমতার মূল্যায়নে ভুল করেছে। যে ব্যক্তি একথা বলে যে, আল্লাহ্ কোন মানুষের কাছে সত্যের জ্ঞান ও জীবন যাপনের জন্য পথ নির্দেশনা নাযিল করেননি, সে মানুষের কাছে অহী নাযিল হওয়াকে অসম্ভব মনে করে এবং এটি আল্লাহর ক্ষমতার অবমূল্যায়ন ও ভুল অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। অথবা সে মনে করে, আল্লাহ্ তো মানুষকে বুদ্ধির অস্ত্র ও তা ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়েছেন কিন্তু তার সঠিক পথ প্রদর্শনের কোন ব্যবস্থা করেননি বরং তাকে দুনিয়ার বুকে অন্ধের মতো কাজ করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন এবং এটি আল্লাহর কুশলতা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে ভুল অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়।
৬০
এ জওয়াবটি যেহেতু ইহুদীদেরকে দেয়া হচ্ছে তাই মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি তাওরাত নাযিলকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কারণ তারা নিজেরাই এটা মানতো। হযরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর তাওরাত নাযিল হয়েছিল একথা যখন তারা স্বীকার করতো তখন তাদের একথাটিই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের এ বক্তব্যকে খণ্ডন করে যে, আল্লাহ্ কোন মানুষের ওপর কিছুই নাযিল করেননি। তাছাড়া এ থেকে কমপক্ষে এতটুকু কথা তো অবশ্যি প্রমাণ হয়ে যায় যে, মানুষের ওপর আল্লাহর কালাম নাযিল হতে পারে এবং ইতিপূর্বে হয়েছে।