وَإِذْ أَسَرَّ ٱلنَّبِىُّ إِلَىٰ بَعْضِ أَزْوَٰجِهِۦ حَدِيثًۭا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِۦ وَأَظْهَرَهُ ٱللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُۥ وَأَعْرَضَ عَنۢ بَعْضٍۢ ۖ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِۦ قَالَتْ مَنْ أَنۢبَأَكَ هَـٰذَا ۖ قَالَ نَبَّأَنِىَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْخَبِيرُ
(এ ব্যাপারটিও লক্ষণীয় যে,) নবী তাঁর এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন। পরে সেই স্ত্রী যখন (অন্য কারো কাছে) সেই গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করে দিল এবং আল্লাহ নবীকে এই (গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করার) ব্যাপারটি জানিয়ে দিলেন তখন নবী (ঐ স্ত্রীকে) কিছুটা সাবধান করলেন এবং কিছুটা মাফ করে দিলেন। নবী যখন তাকে (গোপনীয়তা প্রকাশের) এই কথা জানালেন তখন সে জিজ্ঞেস করলোঃ কে আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছে? নবী বললেনঃ আমাকে তিনি অবহিত করেছেন যিনি সবকিছু জানেন এবং সর্বাধিক অবহিত। ৬
৬
বিভিন্ন রেওয়ায়াতে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, নবী ﷺ অমুক বিষয়টি সম্পর্কে গোপনে তাঁর এক স্ত্রীকে বলেছিলেন এবং সেই স্ত্রী আবার তা অন্য স্ত্রীকে বলেছিলেন। আমাদের মতে, প্রথমতঃ বিষয়টি অনুসন্ধান করে বের করা ঠিক নয়। কারণ, গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করে দেয়ার কারণেই তো আল্লাহ তা’আলা এখানে নবীর ﷺ এক স্ত্রীকে তিরস্কার করেছেন। তাই তা খুঁজে খুঁজে বের করা ও প্রকাশ করার চিন্তায় লেগে যাওয়া আমাদের জন্য কি ঠিক হবে। দ্বিতীয়তঃ আয়াতটি যে উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বিচার করলে গোপনীয় কথাটি কি ছিল তার আদৌ কোন গুরুত্ব থাকে না। আয়াতের উদ্দেশ্যের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকলে আল্লাহ তা’আলা নিজেই তা বলে দিতেন। মূল যে উদ্দেশ্যের জন্য এ বিষয়টি কুরআন মজীদে বর্ণনা করা হয়েছে তা নবীর ﷺ পবিত্র স্ত্রীদের একজনকে তাঁর ভুলের জন্য তিরস্কার করা। তাঁর ভুল হলো, তাঁর মহান ও মর্যাদাবান স্বামী গোপনে তাঁকে যে কথাটি বলেছিলেন তা তিনি গোপন রাখেননি, বরং প্রকাশ করে দিয়েছেন। এটি যদি দুনিয়ার আর দু’দশটি স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কের মত শুধু একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার হতো তাহলে আল্লাহ তা’আলার সরাসরি অহীর মাধ্যমে নবীকে ﷺ তা জানিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তা শুধু জানিয়ে দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করেন নি, বরং তা নিজের সেই কিতাবে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন যা সারা দুনিয়ার মানুষকে চিরদিন পড়তে হবে। কিন্তু এ বিষয়টিকে যে কারণে এরূপ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, তিনি কোন সাধারণ স্বামীর স্ত্রী ছিলেন না। বরং এক মহান ও মর্যাদাবান স্বামীর স্ত্রী ছিলেন যাকে আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন। যাঁকে সর্বক্ষণ কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে একটি নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। যাঁর নেতৃত্বে কুফরী বিধানের স্থলে ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক চেষ্টা-সাধনা চলছিল। এরূপ মহান ব্যক্তিত্বের ঘরে এমন অসংখ্য কথা হতে পারতো যা গোপন না থেকে যদি আগেভাগেই প্রকাশ হয়ে পড়তো তাহলে তিনি যে মহৎ কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছিলেন তার ক্ষতি হতে পারত। তাই সেই ঘরের এক মহিলার থেকে যখন প্রথমবারের মত এই দূর্বলতা প্রকাশ পেল যে, তাঁকে গোপনে যে কথাটি বলা হয়েছিল তা তিনি অন্যের কাছে প্রকাশ করে দিলেন (যদিও তিনি অপর কেউ ছিলেন না, বরং নিজ পরিবারেরই একজন সদস্য ছিলেন) এ কাজের জন্য তৎক্ষনাৎ তাঁকে তিরস্কার করা হলো এবং গোপনেও তাঁকে তিরস্কার করা হয়নি, বরং কুরআন মজীদে প্রকাশ্যে তিরস্কার করা হয়েছে। যাতে শুধু নবীর ﷺ স্ত্রীগণকেই নয় বরং মুসলিম সমাজের সমস্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের স্ত্রীদেরকেও গোপনীয় বিষয় সংরক্ষনের প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। যে গোপনীয় কথাটি প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিল তা বিশেষ কোন গুরুত্ব বহন করতো কিনা এবং তা প্রকাশ হওয়ার কারণে কোন ক্ষতির আশঙ্কা ছিল কিনা আয়াতে সে বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে। তিরস্কার করা হয়েছে শুধু এজন্য যে, গোপনীয় কথা অন্যের কাছে বলে দেয়া হয়েছিল। কারণ, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের মধ্যে যদি এরূপ দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে যে, তারা গোপনীয় বিষয় সংরক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা করেন তাহলে আজ একটি গুরুত্বহীন গোপনীয় বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়লে কাল অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় বিষয়ও প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। সমাজে যে ব্যক্তি যত অধিক দায়িত্বশীল পদমর্যাদার অধিকারী হবে তত অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও নাজুক বিষয়াদি তার পরিবারের লোকদের অবগতিতে আসবে। গোপনীয় বিষয়াদি যদি তাদের মাধ্যমে অন্যদের কাছে পৌঁছে যায় তাহলে এই দুর্বলতা যে কোন সময় যে কোন বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।