“মহান আল্লাহ সবাইকে একত্র করেন। (এক এক ধরনের বা এক এক যুগের) লোকদেরকে আলাদা আলাদা দলে সংগঠিত করেন। তাদেরকে মানবিক আকৃতি ও বাকশক্তি দান করেন। তারপর তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তাদেরকে নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেঃ অবশ্যই তুমি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পারো আমরা তো একথা জানতাম না, তাই আমি তোমাদের ওপর পৃথিবী ও আকাশ এবং তোমাদের পিতা আদমকে সাক্ষী করছি। ভালভাবে জেনে রাখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রব নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাবো। আমার সাথে তোমরা যেসব অঙ্গীকার করছো তারা সেসব তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের প্রতি আমার কিতাব নাযিল করবো। এ কথায় সমস্ত মানুষ বলে ওঠেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মাবুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব ও মাবুদ নেই।”
কেউ কেউ এ ব্যাপারটিকে নিছক রূপক বা উপমা হিসেবে বর্ণিত একটি ব্যাপার মনে করে থাকেন। তাদের মতে এখানে কুরআন মজীদ কেবল একথাই বুঝাতে চায় যে, আল্লাহর রব হবার বিষয়টির স্বীকৃতি মানবিক প্রকৃতির মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং এ কথাটি এখানে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে, যেন এটি বাস্তব জগতে অনুষ্ঠিত একটি ঘটনা ছিল। কিন্তু এ ব্যাখ্যাকে আমি সঠিক মনে করি না। কুরআন ও হাদীসে এটিকে একটি বাস্তব ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর শুধু ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেই শেষ করে দেয়া হয়নি বরং এ সঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনাদিকালের এ অঙ্গীকারটিকে মানুষের বিরুদ্ধে একটি দলীল ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। কাজেই একে নিছক একটি রূপক বর্ণনা গণ্য করার কোন কারণ আমি দেখি না। আমার মতে, বাস্তবে যেমন বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে ঠিক তেমনিভাবে এ ঘটনাটিও ঘটেছিল। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত যেসব মানুষকে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তাদের সবাইকে বাস্তবে একই সঙ্গে জীবন, চেতনা ও বাকশক্তি দান করে নিজের সামনে হাযির করেছিলেন এবং বাস্তবে তাদেরকে এ সত্যটি সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত করেছিলেন যে, তাঁর মহান, পবিত্র ও উন্নত সত্তা ছাড়া তাদের আর কোন রব ও ইলাহ নেই এবং তাঁর বন্দেগী ও হুকুমের আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া তাদের জন্য আর কোন সঠিক জীবন বিধান নেই। এ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে কোন ব্যক্তি যদি অসম্ভব মনে করে থাকে, তাহলে এটি নিছক তার চিন্তার পরিসরের সংকীর্ণতার ফল ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যথায় বাস্তবে মানব সন্তানের বর্তমান পর্যায়ক্রমিক জন্ম ও বিকাশ যতটা সম্ভব, সৃষ্টির আদিতে তার সামষ্টিক আবির্ভাব ও অন্তে তার সামষ্টিক পুনরুত্থান ও সমাবেশ ঠিক ততটাই সম্ভবপর। তাছাড়া মানুষের মত একটি সচেতন, বুদ্ধিমান ও স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টিকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্তির প্রাক্কালে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেয়া এবং তার কাছ থেকে নিজের পক্ষে বিশ্বস্ততার অঙ্গীকার নিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হচ্ছে। এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটা মোটেই বিস্ময়কর নয়। বরং এ ধরনের একটা ঘটনা না ঘটলেই অবাক হতে হতো।