আয়াত
৩১ ) তবে যারা এর বাইরে আর কেউকে চাইবে তারা সীমালংঘনকারী। ২০
فَمَنِ ٱبْتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْعَادُونَ ٣١
৩২ ) যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে। ২১
وَٱلَّذِينَ هُمْ لِأَمَٰنَٰتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَٰعُونَ ٣٢
৩৩ ) আর যারা সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সততার ওপর অটল থাকে। ২২
وَٱلَّذِينَ هُم بِشَهَٰدَٰتِهِمْ قَآئِمُونَ ٣٣
৩৪ ) যারা নামাযের হিফাযত করে। ২৩
وَٱلَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ ٣٤
৩৫ ) এসব লোক সম্মানের সাথে জান্নাতের বাগানসমূহে অবস্থান করবে।
أُو۟لَٰٓئِكَ فِى جَنَّٰتٍ مُّكْرَمُونَ ٣٥
৩৬ ) অতএব হে নবী, কি ব্যাপার যে, এসব কাফের তোমার দিকে ছুটে আসছে? ২৪
فَمَالِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ قِبَلَكَ مُهْطِعِينَ ٣٦
৩৭ ) ডান দিকে ও বাম দিক হতে দলে দলে
عَنِ ٱلْيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ عِزِينَ ٣٧
৩৮ ) তাদের প্রত্যেকে কি এ আশা করে যে, তাকে প্রাচুর্যে ভরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে? ২৫
أَيَطْمَعُ كُلُّ ٱمْرِئٍ مِّنْهُمْ أَن يُدْخَلَ جَنَّةَ نَعِيمٍ ٣٨
৩৯ ) কখখনো না। আমি যে জিনিস দিয়ে তাদের সৃষ্টি করেছি তারা নিজেরা তা জানে। ২৬
كَلَّآ إِنَّا خَلَقْنَٰهُم مِّمَّا يَعْلَمُونَ ٣٩
৪০ ) অতএব না, ২৭ আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের মালিকের। ২৮ আমি তাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর লোকদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে সক্ষম।
فَلَآ أُقْسِمُ بِرَبِّ ٱلْمَشَٰرِقِ وَٱلْمَغَٰرِبِ إِنَّا لَقَٰدِرُونَ ٤٠
২০.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কোরআন, সূরা আল-মু’মিনূন, টীকা-৭।
২১.
আমানতসমূহ বলতে এমন সব আমানত বুঝায়, যা আল্লাহ তা’আলা বান্দার হাতে সোপর্দ করেছেন এবং একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের ওপর আস্থা স্থাপন করে “আমানত” হিসেবে অর্পণ করে। ঠিক তেমনি চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি মানে বান্দা আল্লাহর সাথে যে চুক্তি বা প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয় এবং মানুষ পরস্পরের সাথে যেসব চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয় ও উভয় প্রকার চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি। এ উভয় প্রকার আমানত এবং উভয় প্রকার চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একজন মু’মিনের চরিত্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হাদীসে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সামনে যে বক্তব্যই পেশ করতেন তাতে অবশ্যই বলতেনঃ
لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ، وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ
"সাবধান, যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না তার দ্বীনদারী নেই। (বায়হাকী-শু’আবুল ঈমান।)
২২ .
অর্থাৎ তারা সাক্ষ্য যেমন গেপন করে না, তেমনি তাতে তেমন কোন কম বেশীও করে না
২৩.
এ থেকে নামাযের গুরুত্ব বুঝা যায়। যে ধরনের উন্নত চরিত্র ও মহৎ কর্মশীল লোক জান্নাতের উপযুক্ত তাদের গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে নামায দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামায দিয়েই শেষ করা হয়েছে। তাদের প্রথম গুণ হলো তারা হবে নামাযী।
দ্বিতীয় গুণ হলো, তারা হবে নামাযের প্রতি নিষ্ঠাবান এবং সর্বশেষ গুণ হলো, তারা নামযের হিফাযত করবে। নামাযের হিফাযতের অর্থ অনেক কিছু। যথা সময়ে নামায পড়া, দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদ পাক-পবিত্র আছে কিনা নামাযের পূর্বেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া, অজু থাকা এবং অজু করার সময় অঙ্গ-প্রত্যংগগুলো ভালভাবে ধোয়া, নামাযের ফরয ওয়াজিব ও মোস্তাহাব গুলো ঠিকমত আদায় করা, নামাযের নিয়ম-কানুন পুরোপুরি মেনে চলা, আল্লাহর নাফরমানী করে নামাযকে ধ্বংস না করা, এসব বিষয়ও নামাযের হিফাযতের অন্তর্ভুক্ত।
২৪.
যে সমস্ত লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ দেখে এবং কুরআনের বক্তব্য শুনে তা নিয়ে হাসি-তামাসা করা এবং তার প্রতি বিদ্রূপবান নিক্ষেপ করার জন্য চারদিক থেকে ছুটে আসতো এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে।
২৫.
অর্থ হলো যেসব লোকের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এই মাত্র বর্ণনা করা হলো আল্লাহর জান্নাত তো তাদের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু যারা সত্যের বাণী শোনা পর্যন্ত পছন্দ করে না এবং ন্যায় ও সত্যের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য এভাবে ছুটে আসছে তারা জান্নাতের দাবীদার কিভাবে হতে পারে? আল্লাহ কি এমন সব লোকদের জন্যই তার জান্নাত তৈরি করেছেন? এ পর্যায়ে সূরা আল কলমের ৩৪ থেকে ৪১ আয়াত সামনে থাকা দরকার। মক্কার কাফেররা বলতো, আখেরাত যদি থাকেও তাহলে এ দুনিয়ায় তারা যেভাবে আমোদ প্রমোদ মত্ত থাকছে সেখানেও একইভাবে মত্ত থাকবে। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান পোষণকারী লোকেরা দুনিয়ায় যেভাবে দুরবস্থার শিকার হয়ে আছে সেখানেও ঠিক তাই থাকবে। উল্লেখিত আয়াতসমূহে কাফেরদের এ ধ্যান-ধারণার জবাব দেয়া হয়েছে।
২৬.
এখানে এ আয়াতাংশের দু’টি অর্থ হতে পারে। আগে বর্ণিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ধরে নিলে এর অর্থ হবে, যে উপাদানে এসব লোককে সৃষ্টি করা হয়েছে সে হিসেবে সব মানুষ সমান। জান্নাতে যাওয়ার কারণ যদি ঐ উপাদানটি হয় তাহলে সৎ ও অসৎ, জালেম ও ন্যায়নিষ্ঠা, অপরাধী ও নিরপরাধ সবারই জান্নাতে যাওয়া উচিত। কিন্তু জান্নাতে যাওয়ার অধিকার যে, মানুষের সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় না বরং শুধু তার গুণাবলীর ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টির ফায়সালার জন্য সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিই যথেষ্ট। আর এ আয়াতাংশকে যদি পরবর্তী বিষয়ের পূর্বাভাস বা ভূমিকা হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে তার অর্থ হবে এসব লোক নিজেরাই নিজেদেরকে আমার আযাব থেকে নিরাপদ মনে করছে আর যে ব্যক্তি আমরা কাছে জবাবদিহি সম্পর্কে তাদেরকে সাবধান করে দেয় তাকে বিদ্রূপ ও হাসি-তামাসা করছে। অথচ আমি চাইলে যখন ইচ্ছা দুনিয়াতেও তাদেরকে আযাব দিতে পারি আবার যখন ইচ্ছা মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেও উঠাতে পারি। তারা জানে নগণ্য এক ফোটা বীর্য দিয়ে আমি তাদের সৃষ্টির সূচনা করেছি এবং তারপর তাদেরকে সচল ও সক্ষম মানুষ বানিয়েছি। তাদের এ সৃষ্টি কৌশল সম্পর্কে যদি তারা চিন্তা-ভাবনা করতো তাহলে কখনো এ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী তারা হতো না যে, এখন তারা আমার কর্তৃত্বের গণ্ডির বাইরে কিংবা আমি তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নই।
২৭ .
অর্থাৎ তারা যা মনে করে বসে আছে ব্যাপার আসলে তা নয়।
২৮.
এখানে মহান আল্লাহ নিজেই নিজের সত্তার শপথ করেছেন। “উদয়াচলসমূহ ও অস্তাচলসমূহ” এ শব্দ ব্যবহারের কারণ হলো, গোটা বছরের আবর্তন কালে সূর্য প্রতিদিনই একটি নতুন কোণ থেকে উদিত হয় এবং একটি নতুন কোণে অস্ত যায়। তাছাড়া ও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্রমাগত উদিত ও অস্তমিত হতে থাকে। এ হিসেবে সূর্যের উদয় হওয়ার ও অস্ত যাওয়ার স্থান একটি নয়, অনেক। আরেক হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের তুলনায় একটি দিক হলো পূর্ব এবং আরেকটি দিক হলো পশ্চিম। তাই সূরা শূ’আরার ২৮ আয়াতে এবং সূরা মুয্যাম্মিলের ১৯ আয়াতে رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ রাব্বিল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরেক বিচারে পৃথিবীর দু’টি উদয়াচল এবং দু’টি অস্তাচল আছে। কারণ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য অস্ত যায় তখন অপর গোলার্ধে উদিত হয়। এ কারণে সূরা আর রহমানের ১৭ আয়াতে
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইনি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য, দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আর রহমান, টীকা ১৭)।