আল মাআরিজ

৪৪ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
২১ ) আর যে-ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে।
وَإِذَا مَسَّهُ ٱلْخَيْرُ مَنُوعًا ٢١
২২ ) তবে যারা নামায পড়ে ১৪ (তারা এ দোষ থেকে মুক্ত) ।
إِلَّا ٱلْمُصَلِّينَ ٢٢
২৩ ) যারা নামায আদায়ের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান। ১৫
ٱلَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَآئِمُونَ ٢٣
২৪ ) যাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক আছে
وَٱلَّذِينَ فِىٓ أَمْوَٰلِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ ٢٤
২৫ ) প্রার্থী ও বঞ্চিতদের। ১৬
لِّلسَّآئِلِ وَٱلْمَحْرُومِ ٢٥
২৬ ) যারা প্রতিফলের দিনটিকে সত্য বলে মানে। ১৭
وَٱلَّذِينَ يُصَدِّقُونَ بِيَوْمِ ٱلدِّينِ ٢٦
২৭ ) যারা তাদের প্রভুর আযাবকে ভয় করে। ১৮
وَٱلَّذِينَ هُم مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ ٢٧
২৮ ) কারণ তাদের প্রভুর আযাব এমন বস্তু নয় যে সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়।
إِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَأْمُونٍ ٢٨
২৯ ) যারা নিজেদের লজ্জাস্থান নিজের স্ত্রী অথবা মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্যদের থেকে হিফাযত করে। ১৯
وَٱلَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَٰفِظُونَ ٢٩
৩০ ) স্ত্রী ও মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে তারা তিরস্কৃত হবে না।
إِلَّا عَلَىٰٓ أَزْوَٰجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ ٣٠
১৪ .
কোন ব্যক্তির নামায পড়ার অপরিহার্য অর্থ হলো সে আল্লাহ, রসূল কিতাব ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস এবং সাথে সাথে নিজের ও বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করার প্রচেষ্টা ও চালিয়ে যায়।
১৫.
অর্থাৎ কোন প্রকার অলসতা, আরামপ্রিয়তা, ব্যস্ততা, কিংবা আকর্ষণ তাদের নামাযের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। নামাযের সময় হলে সে সবকিছু ফেলে রেখে তার প্রভুর ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হয়। عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ এর আর একটি অর্থ বর্ণনা করেছেন হযরত উকবা ইবনে আমের। তাহলো, সে পূর্ণ প্রশান্তি এবং বিনয় ও নিষ্ঠাসহ নামায পড়ে, কাকের মত ঠোকর মারে না। ঠোকর মেরেই কোন রকমে নামায শেষ করার চেষ্টা করে না। আবার নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক তাকিয়েও দেখেনা। প্রচলিত আরবী বাক রীতিতে বদ্ধ বা স্থির পানিকে ماء دائم মায়ে দায়েম বলা হয়। এরই আলোকে এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৬.
সূরা যারিয়াতের ১৯ আয়াতে বলা হয়েছে, “তাদের সম্পদে প্রার্থী এবং বঞ্চিতদের নির্দিষ্ট হকে আছে। ” কেউ কেউ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হকের অর্থ মনে করেছেন ফরয যাকাত। কারণ ফরয যাকাতেই নেসাব ও হার দু’টিই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সূরা মা"আরিজ সর্বসম্মত মতে মক্কায় অবতীর্ণ সূরা। কিন্তু নেসাব ও হার নির্দিষ্ট করে যাকাত ফরয হয়েছে মদীনায়। অতএব হকের সঠিক অর্থ হলো, প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদে একটা অংশ নির্দিষ্টকরে রেখেছে। এটাকে তাদের হক মনে করে তারা নিজেরাই তা দিয়ে দেয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর, মুজাহিদ, শা"বী এবং ইবরাহীম নাখয়ী এ অর্থই বর্ণনা করেছেন।

প্রার্থী মানে পেশাদার ভিক্ষুক নয়, বরং যেসব অভাবী মানুষ অন্যের সাহায্যপ্রার্থী তারা। আর বঞ্চিত অর্থ এমন লোক যার কোন আয়-উপার্জন নেই। অথবা সে উপার্জনের জন্য চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু তাতে তার প্রয়োজন পূরণ হয় না। অথবা কোন দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের শিকার হয়ে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে অথবা আয়-উপার্জনের সামর্থ্যই নেই। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারে যখনই জানা যাবে যে, তারা প্রকৃতই বঞ্চিত তখন একজন আল্লাহভীরু মানুষ এ জন্য অপেক্ষা করে না যে, সে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুক। বরং তার বঞ্চিত থাকার কথা জানা মাত্র সে নিজেই অগ্রসর হয়ে তাকে সাহায্য করে। (আরো জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা যারিয়াত, টীকা ১৭)

১৭ .
অর্থাৎ দুনিয়াতে নিজেকে দায়িত্বহীন এবং জবাবদিহি থেকে মুক্ত মনে করে না। বরং এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে যে, একদিন আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে তাদেরকে নিজেদের সব কাজের সব হিসেব দিতে হবে।
১৮.
অন্য কথায় তাদের অবস্থা কাফেরদের মত নয়। কাফেররা দুনিয়াতে সব রকম গোনাহ, অপরাধ ও জুলুম-অত্যাচারে লিপ্ত থেকেও আল্লাহকে ভয় করে না। কিন্তু তারা নিজস্বভাবে যথাসম্ভব নৈতিকতা ও কাজ-কর্মে সদাচরণ করা সত্ত্বেও সবসময় আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। সবসময় তারা এআশঙ্কা করে যে, আল্লাহর আদালতে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি আমাদের নেক কাজের তুলনায় অধিক বলে প্রমাণিত না হয় এবং এভাবে আমরা শাস্তির উপযুক্ত বলে প্রমাণিত না হই। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আল মু’মিনূন টীকা ৫৪ এবং সূরা আয যারিয়াত, টীকা ১৯)
১৯.
লজ্জাস্থানের হিফাজতের অর্থ ব্যভিচার না করা এবং উলঙ্গপনা থেকেও দূরে থাকা। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আল মু’মিনূন টীকা ৬; আন নূর, টীকা ৩০-৩২ এবং আল আহযাব, টীকা ৬২)।
অনুবাদ: