وَٱتَّقُوا۟ فِتْنَةًۭ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنكُمْ خَآصَّةًۭ ۖ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ
আর সেই ফিতনা থেকে দূরে থাকো, যার অনিষ্টকারিতা শুধুমাত্র তোমাদের গোনাহগারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ২০ জেনে রাখো, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
২০
এখানে 'ফিতনা' দ্বারা একটি সর্বব্যাপী সামাজিক অনাচার বুঝানো হয়েছে। এ অনাচার মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ে মানুষের জীবনে দুর্ভাগ্য ও ধ্বংস ডেকে আনে। শুধুমাত্র যারা গোনাহ করে তারই এ দুর্ভাগ্য ও ধ্বংসের শিকার হয়না বরং এর শিকার তারাও হয় যারা, এ পাপাচারে জর্জরিত সমাজে বসবাস করা বরদাশত করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ ধরে নেয়া যেতে পারে, যখন কোন শহরে ময়লা-আবর্জনা এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে জমে থাকে তখন তার প্রভাবও থাকে সীমাবদ্ধ। এ অবস্থায় শুধুমাত্র যেসব লোক নিজেদের শরীরে ও ঘরোয়া পরিবেশে ময়লা আবর্জনা ভরে রেখেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু যখন সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ব্যাপকভাবে জমে উঠতে থাকে এবং সারা শহরে ময়লা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালাবার মতো একটি দলও থাকে না তখন মাটি, পানি ও বাতাসের সর্বত্রই বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে যে মহামারী দেখা দেয় তাতে যারা ময়লা-আবর্জনা ছড়ায়, যারা নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকে এবং যারা ময়লা ও আবর্জনাময় পরিবেশে বসবাস করে তারা সবাই আক্রান্ত হয়। নৈতিক ময়লা ও আবর্জনার বেলায়ও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে। যদি তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ব্যক্তির মধ্যে থাকে এবং সৎ ও সত্যনিষ্ঠ সমাজের প্রতিপত্তির চাপে কোণঠাসা ও নিস্তেজ অবস্থায় থাকে, তাহলে তার ক্ষতিকর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু যখন সমাজের সামষ্টিক বিবেক দুর্বল হয়ে পড়ে, নৈতিক অনিষ্টগুলোকে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা তার থাকে না। সমাজ অঙ্গনে অসৎ, নির্লজ্জ ও দুশ্চরিত্র লোকেরা নিজেদের ভেতরের ময়লাগুলো প্রকাশ্যে উৎক্ষিপ্ত করতে ও ছড়াতে থাকে। সৎলোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত সততা ও সদগুণাবলী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং সামাজিক ও সামষ্টিক দুষ্কৃতির ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে। তখন সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। এ সময় এমন ব্যাপক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়, যার ফলে বড়-ছোট, সবল-দুর্বল সবাই সমানভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত হয়।
কাজেই আল্লাহর বক্তব্যের মর্ম হচ্ছে, রসূল যে সংস্কার ও হেদায়াতের কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছেন এবং যে কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন, তার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় দিক দিয়ে তোমাদের জন্য যথার্থ জীবনের গ্যারান্টি। যদি সাচ্চা দিলে আন্তরিকতা সহকারে তাতে অংশ না নাও এবং সমাজের বুকে যেসব দুস্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলোকে বরদাশত করতে থাকো তাহলে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেবে। যদিও তোমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক থেকে থাকে, যারা কার্যত দুস্কৃতিতে লিপ্ত হয় না এবং দুস্কৃতি ছড়াবার জন্য তাদেরকে দায়ীও করা যায় না বরং নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে তারা সুকৃতির অধিকারী হয়ে থাকে, তবুও এ ব্যাপক বিপদ তোমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে। সূরা আ'রাফের ১৬৩-১৬৬ আয়াতে শনিবার ওয়ালাদের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত পেশ করতে গিয়ে এ এক কথাই বলা হয়েছে। এ দৃষ্টিভঙ্গীকেই ইসলামের ব্যক্তিচরিত্র ও সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মৌলিক দৃষ্টিকোণ বলা যেতে পারে।