أَفَمَنْ أَسَّسَ بُنْيَـٰنَهُۥ عَلَىٰ تَقْوَىٰ مِنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٍ خَيْرٌ أَم مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَـٰنَهُۥ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٍۢ فَٱنْهَارَ بِهِۦ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
তাহলে তুমি কি মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নিজের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করলো সে ভাল, না যে ব্যক্তি তার ইমারতের ভিত উঠালো একটি পতাকার স্থিতিহীন ফাঁপা প্রান্তের ওপর ১০৩ এবং তা তাকে নিয়ে সোজা জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়লো? এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ কখনো সোজা পথ দেখান না। ১০৪
১০৩
এখানে কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে,جرف(জুরুফ)। আরবী ভাষায় সাগর বা নদীর এমন কিনারাকে জুরুফ বলা হয় স্রোতের টানে যার তলা থেকে মাটি সরে গেছে এবং ওপরের অংশ কোন বুনিয়াদ ও নির্ভর ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। যারা আল্লাহকে ভয় না করা এবং তার সন্তুষ্টির পরোয়া না করার ওপর নিজেদের কার্যক্রমের ভিত গড়ে তোলে, তাদের জীবন গঠনকে এখানে এমন একটি ইমারতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যা এমনি ধরনের একটি অন্তঃসরা শূন্য অস্থিতিশীল সাগর কিনারে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি একটি নজিরবিহীন উপমা। এর চাইতে সুন্দরভাবে এ অবস্থার আর কোন চিত্র, আকা সম্ভব নয়। এর সমগ্র অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে বুঝে নিতে হবে যে, দুনিয়ার জীবনের যে উপরিভাগের ওপর মু’মিন, মুনাফিক কাফের, সৎকর্মশীল, দুষ্কৃতকারী তথা সমস্ত মানুষ কাজ করে, তা মাটির উপরিভাগের স্তরের মতো যার ওপর দুনিয়ার সমস্ত ইমারত নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এ স্তরের মধ্যে কোন স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নেই। বরং এর নীচে নিরেট জমি বিদ্যমান থাকার ওপরই এর স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। যে স্তরের নীচের মাটির কোন জিনিসের যেমন নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে তার ওপর যদি কোন মানুষ (যে মাটির প্রকৃত অবস্থা জানে না) বাহ্যিক অবস্থায় প্রতারিত হয়ে নিজের গৃহ নির্মাণ করে তাহলে তা তার গৃহসহ ধ্বসে পড়বে এবং সে কেবল নিজেই ধ্বংস হবে না। বরং এ অস্থিতিশীল ভিতের ওপর নির্ভর করে নিজের জীবনের যা কিছু পুঁজিপাট্রা সে সংশ্লিষ্ট গৃহের মধ্যে জমা করেছিল সবই এ সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক স্তরটিরও এ উপমাটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। এ স্তরটির ওপরই আমরা সবাই আমাদের জীবনের যাবতীয় কার্যক্রমের ইমারত নির্মাণ করি। অথচ এর নিজের কোন স্থিতি ও স্থায়িত্ব নেই। বরং আল্লাহর ভয়তার সামনে জবাবদিহির অনুভূতি এবং তার ইচ্ছা ও মর্জি মতো চলার শক্ত ও নিরেট পাথর খণ্ড তার নীচে বসানো থাকে, এরই ওপর তার মজবুতী ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। যে অজ্ঞ ও অপরিণামদর্শী মানুষ নিছক দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে আল্লাহর ভয়ে ভীত না হয়ে এবং তার সন্তোষ লাভের পরোয়া না করে দুনিয়ায় কাজ করে যায় সে আসলে নিজের জীবন গঠনের বুনিয়াদ নীচে থেকেই অন্তঃসার শূন্য করে দেয়। তার শেষ পরিণতি এছাড়া আর কিছুই নয়, যে ভিত্তিহীন যে উপরি স্তরের ওপর সে তার সারা জীবনের সঞ্চয় জমা করেছে। একদিকে অকস্মাৎ তা ধ্বসে পড়বে এবং তাকে তার জীবনের সমস্ত সম্পদসহ ধ্বংস ও বরবাদ করে দেবে।
১০৪
সোজা পথ অর্থাৎ যে পথে মানুষ সফলকাম হয় এবং যে পথে অগ্রসর হয়ে সে যথার্থ সাফল্যের মনযিলে পৌঁছে যায়।