এই আয়াতগুলোতে যেসব সৎকাজের উল্লেখ করা হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিভিন্ন বাণীর মাধ্যমে সেগুলোর বিপুল মর্যাদাও সওয়াবের কথা ঘোষণা করেছেন। فَكُّ رَقَبَةٍ (গলাকে দাসত্বমুক্ত করা) সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবু হুরাইরা (রা.)। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি একজন মু’মিন গোলামকে আযাদ করে আল্লাহ ঐ গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বদলে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবেন। হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা এবং লজ্জাস্থানের বদলে লজ্জাস্থান। (মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ।) হযরত আলী ইবনে হুসাইন (ইমাম যইনুল আবেদীন) এই হাদীসের বর্ণনাকারী সা’দ ইবনে মারজানাহকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি নিজে আবু হুরাইরার (রা.) কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনেছো? তিনি জবাব দেন, হাঁ। কথা শুনে ইমাম যুইনল আবেদ্বীন নিজের সবচেয়ে মূল্যবান গোলামটিকে ডাকেন এবং সেই মুহূর্তেই তাকে আযাদ করে দেন। মুসলিম শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে, এই গোলামটির জন্য লোকেরা তাঁকে দশ হাজার দিরহাম দিতে চেয়েছিল। ইমাম আবু হানীফা(র) ও ইমাম শা’বী (র) এই আয়াতের ভিত্তিতে বলেন, গোলাম আযাদ করা সাদকার চাইতে ভালো। কারণ আল্লাহ সাদকার কথা বলার আগে তার কথা বলেছেন।
মিসকিনদের সাহায্য করার ফজিলত সম্পর্কে ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী ও অসংখ্য হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে এর মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ
السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْساعى فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَأَحْسِبُهُ قَالَ وَكَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُوكا لصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ-
“বিধবা ও মিসকিনদের সাহায্যার্থে যে ব্যক্তি প্রচেষ্টা চালায় সে আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তির সমতুল্য। (আর হযরত আবু হুরাইরা বলেনঃ) আমার মনে হচ্ছে, রসূলুল্লাহ ﷺ একথাও বলেন যে, সে ঠিক সেই ব্যক্তির মতো যে নামাযে রত আছে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে নামায পড়ে যাচ্ছে, আরাম করছে না এবং সেই রোযাদারের মতো যে অনবরত রোযা রেখে যাচ্ছে, কখনো রোযা ভাঙে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
এতিমদের সম্পর্কেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য বাণী রয়েছে। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন আত্মীয় বা অনাত্মীয় এতিমের ভরণ পোষণ করে সে ও আমি জান্নাতে ঠিক এভাবে থাকবো। একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলী দু’টি পাশাপাশি রেখে দেখান এবং দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখেন।” (বুখারী) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটি উদ্ধৃত করেছেন, “মুসলমানদের বাড়িগুলোর মধ্যে যে বাড়িতে কোন এতিমের সাথে সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিই সর্বোত্তম বাড়ি এবং যে বাড়িতে কোন এতিমের সাথে অসদ্ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি সবচেয়ে খারাপ বাড়ি।” (ইবনে মাজাহ, বুখারী ফিল আদাবিল মুফরাদ)। হযরত আবু উমামাহ বলেছেন, রসূলূল্লাহ ﷺ বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন এতিমের মাথার হাত বুলায় এবং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হাত বুলায়, সে ঐ এতিমের মাথায় যতগুলো চুলের উপর হাত বুলিয়েছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য নেকী লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি কোন এতিম ছেলে বা মেয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে সে ও আমি জান্নাতে এভাবে থাকবো। একথা বলে তিনি নিজের দু’টি আঙ্গুল মিলিয়ে দেখান। (মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিযী)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের পানাহারে কোন এতিমকে শামিল করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তবে সে ব্যক্তি যদি ক্ষমার অযোগ্য কোন গোনাহ করে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। (শারহুস সুন্নাহ) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করেন, “আমার মন বড় কঠিন।” রসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বলেন, “এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকিনকে আহার করাও।” (মুসনাদে আহমাদ)।