فَلَمَّا نَظَرَ رَكَضَ لِاسقِبَالِهِم مِن بَابِ الخِيمَةِ وَسَجَدَ اِلَى الَارضِ (تكوين: ٣-١٨)
তারপর যেখানে বলা হচ্ছে, হেতের সন্তানরা হযরত সারাকে দাফন করার জন্য বিনামূল্যে কবরের জন্য জমি দান করে, সেখানে উর্দূ বাইবেলে যা বলা হয়েছে তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়। “ইবরাহীম উঠে বনী হেতের সামনে, যারা সেই দেশের বাসিন্দা ছিল, কুর্নিশ করলেন এবং তাদের সাথে এভাবে আলাপ করলেন।” (বাংলা বাইবেলে বলা হয়েছেঃ তখন আব্রাহাম উঠিয়া তদ্দেশীয় লোকদিগের, অর্থাৎ হেতের সন্তানগণের কাছে প্রণিপাত করিলেন ও সম্ভাসন করিয়া কহিলেন,) তারপর যখন তারা শুধু কবরের জমিই নয়, পুরো একটি ক্ষেত এবং একটি গুহা দান করে তখন “ইবরাহীম সেই দেশীয় লোকদের সামনে মাথা নত করলেন” (বাংলা বাইবেলে বলা হয়েছেঃ তখন আব্রাহাম তদ্দেশীয় লোকদের সামনে প্রণিপাত করিলেন। কিন্তু আরবী অনুবাদে এ উভয় জায়গায় কুর্নিশ করা, প্রণিপাত করা, মাথা নত করা ইত্যাদির জন্য “সিজদাহ” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
فقام ابراهيم وسجد لشعب الارض لبنى حت (تكوين: ٧-٢٢)
فسجد ابراهيم امام شعب الارض (تكوين: ١٢-٢٣)
ইংরেজী বাইবেলে এখানে যে শব্দাবলী ব্যবহার করা হয়েছে তা হচ্ছেঃ
“Bowed himself towards the ground.
“Bowed himself to the people of the land and Abrahan bowed down himself before the people of the land”
এ ধরনের বিষয়ের বহু দৃষ্টান্ত বাইবেলে পাওয়া যায়। এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, বর্তমানে ইসলামী পরিভাষায় “সিজদাহ” বলতে যা বুঝায় এ সিজদাহর অর্থ তা নয়।
যারা বিষয়টির যথার্থ স্বরূপ না জেনে এর ব্যাখ্যায় হালকাভাবে লিখে দিয়েছেন যে, পূর্ববর্তী শরীয়াতগুলোয় গায়রুল্লাহকে সম্মানের সিজদা অথবা আদবের সিজদা করা জায়েয ছিল তারা নিছক একটি ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। ইসলামী পরিভাষায় যাকে সিজদা বলা হয়, যদি সিজদা বলতে তাকেই বুঝানো হয় তাহলে আল্লাহর পাঠানো শরীয়াতে তা কোনদিন গায়রুল্লাহর জন্য জায়েয ছিল না। বাইবেলে উল্লেখিত হয়েছে যে, ব্যবিলনের পরাধীনতার যুগে বাদশাহ অহশ্বেরশ যখন হামানকে নিজের প্রধান অধ্যক্ষ করলেন এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য তাকে সিজদা করার জন্য সবাইকে হুকুম দিলেন তখন বনী ইসরাঈলের পরম খোদাভক্ত ওলী মর্দখয় (মর্দকী) তা করতে অস্বীকার করলেন। (ইষ্টের ৩: ১-২) তালমূদে এ ঘটনাটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এর যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা প্রণিধানযোগ্যঃ
“বাদশাহর কর্মচারীরা জিজ্ঞেস করলোঃ ব্যাপার কি, তুমি কেনইবা হামানকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছো? আমরাও তো মানুষ কিন্তু আমরা বাদশাহর হুকুম মেনে চলি। তিনি জবাব দিলেনঃ তোমরা অজ্ঞ, একজন মরণশীল মানুষ, যে কাল মাটির সাথে মিশে যাবে, সে কি এমন যোগ্যতা রাখে যে, তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়া হবে? আমি কি এমন একজনকে সিজদা করবো, যে একটি মহিলার পেট থেকে জন্ম নিয়েছে? যে কাল শিশু ছিল, আজ যুবক হয়েছে, কাল বুড়ো হয়ে যাবে এবং পরশু মারা যাবে? না, আমি তো একমাত্র সেই অনাদি অনন্ত আল্লাহর সামনে মাথা নত করবো যিনি চিরঞ্জীব ও স্বয়ম্ভু....... যিনি বিশ্বলোকের স্রষ্টা ও শাসক, আমি তো একমাত্র তাঁকেই সম্মান করবো, আর কাউকে নয়।
কুরআন নাযিলের প্রায় এক হাজার বছর আগে একজন ইসরাঈলী মু’মিনের কন্ঠে কথাগুলো উচ্চারিত হয়। কোন অর্থেও গায়রুল্লাহকে সিজদা করা বৈধ এ ধরনের চিন্তার নামগন্ধও এতে পাওয়া যায় না।