সূরা আল বাকারার আয়াত এবং এ আয়াতটির মধ্যে বাহ্যত কেবলমাত্র এতটুকু বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শুধু “রক্ত” বলা হয়েছে আর এখানে বলা হয়েছে “বহমান রক্ত।” অর্থাৎ কোন প্রাণীকে জখম বা জবাই করে যে রক্ত বের করা হয়। কিন্তু এটা আসলে কোন বিরোধ নয় বরং ঐ নির্দেশটির ব্যাখ্যা। অনুরূপভাবে সূরা আল মায়েদাহর আয়াতে এ চারটি জিনিস ছাড়াও আরো কয়েকটি জিনিসের হারাম হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ এমনসব প্রাণীকেও সেখানে হারাম গণ্য করা হয়েছে যারা কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আঘাত পেয়ে, ওপর থেকে পড়ে অথবা ধাক্কা খেয়ে মরে গেছে। অথবা কোন হিংস্র প্রাণী যাকে চিরে ফেড়ে ফেলেছে। কিন্তু আসলে এটাও কোন বিরোধ নয়। বরং এটাও একটা ব্যাখ্যা। এ থেকে জানা যায়, এভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাণীরাও ‘মরা’ বলে গণ্য হবে।
মুসলিম ফকীহগণের একটি দলের মতে আহারযোগ্য প্রাণীদের এ চারটি অবস্থায়ই মাত্র হারাম। এছাড়া আর সব ধরনের প্রাণী খাওয়া জায়েয। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত আয়েশা (রা.)ও এমত পোষণ করতেন। কিন্তু একাধিক হাদীস থেকে জানা যায়, নবী ﷺ কোন কোন জিনিস খেতে মানা করেছেন অথবা সেগুলোর প্রতি নিজের ঘৃণা ও অপছন্দের ভাব প্রকাশ করেছেন। যেমন গৃহপালিত গাধা, নখরযুক্ত হিংস্র পশু ও পাঞ্জাধারী পাখি। এ কারণে অধিকাংশ ফকীহ হারামকে এ চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তাঁরা এর সীমারেখা আরো বিস্তৃত করেছেন। কিন্তু এরপরও আবার বিভিন্ন জিনিসের হারাম ও হালাল হওয়ার ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে যেমন গৃহপালিত গাধা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈ হারাম গণ্য করেন। কিন্তু অন্যান্য কয়েকজন ফকীহ বলেন, গৃহপালিত গাধা হারাম নয় বরং কোন বিশেষ কারণে নবী ﷺ এক সময় এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। হানাফীদের মতে হিংস্র পশু, শিকারী পাখি ও মৃত ভক্ষণকারী প্রাণী একবারেই হারাম। কিন্তু ইমাম মালেক ও ইমাম আওযাঈর মতে শিকারী পাখি হালাল। ইমাম লাইসের মতে বিড়াল হালাল। ইমাম শাফেঈর মতে একমাত্র মানুষের ওপর আক্রমণকারী হিংস্র পশু যেমন বাঘ, সিংহ, নেকড়ে ইত্যাদি হারাম। ইকরামার মতে কাক ও চিল উভয়ই হালাল। অনুরূপভাবে হানাফীরা সব রকমের পোকামাকড় হারাম গণ্য করে। কিন্তু ইবনে আবী, লাইলা, ইমাম মালেক ও আওযাঈর মতে সাপ হালাল।
এসব বিভিন্ন বক্তব্য ও এর পক্ষের বিপক্ষের যুক্তি প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কারভাবে একথা জানা যায় যে, আসলে কুরআনে যে চারটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়াতে সে চারটিই চূড়ান্ত ও অকাট্যভাবে হারাম। এ চারটি জিনিস যেখানে নেই সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের মাকরূহ বা অপছন্দের ভাব রয়েছে। যেগুলোর মাকরূহ হবার বিষয়টি সহী হাদীসের মাধ্যমে নবী ﷺ থেকে প্রমাণিত সেগুলো হারাম হবার বেশী নিকটবর্তী। আর যেগুলোর ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে তাদের হারাম হবার ব্যাপারটি সন্দেহযুক্ত। তবে রুচিগতভাবে কোন কোন শ্রেণীর মানুষ কোন কোন জিনিস পছন্দ করে না অথবা শ্রেণীগতভাবে কোন কোন শ্রেণীর মানুষ কোন কোন জিনিস অপছন্দ করে বা জাতিগতভাবে কোন কোন জাতি কোন কোন জিনিসকে ঘৃণা করে, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর শরীয়াত কাউকে বাধ্য করে না যে, যে জিনিসটি হারাম করা হয়নি প্রয়োজন না হলেও অযথা তা তাকে খেতেই হবে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি নিজের অপছন্দকে আইনে পরিণত করবে এবং সে নিজে যা পছন্দ করে না অন্যেরা তা ব্যবহার করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে, এ ধরনের কোন অধিকারও শরীয়াত কাউকে দেয়নি।